ঢাকা, বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারসাম্যহীনদের মধ্যে খাবার বিতরণ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৭:১০, ৩ জুলাই ২০২০

প্রতিদিনের ন্যায় শততম দিনে দুপুরে রান্না করা খাবার নিয়ে কয়েকজন তরুণ বের হন সুনামগঞ্জ পৌর শহরে মল্লিকপুর আবাসিক এলাকায়। এরপর বিভিন্নস্থানে রাস্তার পাশে, যাত্রী ছাউনিতে, পরিত্যক্ত ঘরের বারান্দা, মার্কেটের খালি জায়গা অথবা খোলা আকাশের নিচে থাকা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষদের হাতে এই খাবার তুলে দেন। 

করোনা পরিস্থিতিতে শততম দিন এভাবেই শহরে ঘুরে ঘুরে এসব অসহায় মানুষদের মাঝে খাবার বিলি করছেন তাঁ=রা। এখন প্রতিদিন তাদের খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকেন এই মানুষগুলো।

আজ শুক্রবার দুপুরে খাবার বিতরণ করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। তিনি বলেন, ‘যারা এই মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বর্তমানে সকল হোটেল ও রেস্তোরা বন্ধ, তরুণরা যে কাজটি চালিয়েছে যাচ্ছে তা যেন অব্যাহত থাকে সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ মেট্রিক টন চাউল প্রদান করা হয়েছে। 

তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের বিভিন্নস্থানে থাকা এসব মানুষেরা রেস্তোরাঁ অথবা খাবারের দোকানের উচ্ছিষ্ট নিয়েই খেয়ে দিন কাটান। এই মানুষগুলোকে ‘পাগল’ বলে অনেকেই এড়িয়ে যান। এদের কেউ কেউ আবার অসুস্থ। এরা কারো কাছে কোনো কিছু চায় না। অন্য মানুষের কাছেও যায় না। করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে শহরের সব রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মানুষগুলো পড়েন চরম বিপাকে। এদের মধ্যে বয়স্ক পুরুষ, নারী ও শিশু রয়েছেন। এদের কোনো ঘরবাড়ি নেই।

খাবার বিতরণের এই মানবিক কাজে যুক্তদের একজন হলেন শহরের মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা জগন্নাথ বণিক। এই তরুণই মূলত এখন এই কাজটির সমন্বয় করছেন। 
তিনি জানান, ‘করোনার কারণে সুনামগঞ্জে গত ২৫ মার্চ থেকে সব রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান বন্ধ। এরপর থেকে শহরে মানুষজনের চলাচলও কম। এ অবস্থায় শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই অসহায় মানুষগুলো পড়েছেন খাবার সংকটে। গত ২৬ মার্চ থেকে শহরের উত্তর আরপনিনগর এলাকার বাসিন্দা রুহেল মিয়া প্রথম খাবার নিয়ে শহরে বের হন। রুহেল নিজে শহরে ঘুরে ঘুরে পুরনো কাপড়ের ব্যবসা করেন। এসব লোকজন কে-কোথায় থাকেন তিনি জানেন। সেই থেকে শুরু। এরপর এর সঙ্গে যুক্ত হন জগন্নাথ বণিক ও অন্যরা।

এদিকে আজ ১০০ জনকে দুপুরের খাবার দেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের এই কাজ দেখে এখন অনেকেই অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।
জানা গেল, এই খাবার বিতরণের সঙ্গে পৌর শহরের মধ্যবাজার এলাকার ব্যবসায়ী চন্দন রায়, হোমিও চিকিৎসক দেবব্রত বণিক, সিএনজিচালক হাফিজুর রহমানসহ আরও কয়েকজন যুক্ত রয়েছেন। দেবব্রত বণিক শুরু থেকে প্রতিদিনের সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া দিয়ে আসছেন। প্রতিদিন দুপুর ১টার পর খাবার নিয়ে শহরে বের হন তারা। এরপর শহরের ওয়েজখালী, বাস টার্মিনাল, স্টেশন রোড, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, আলফাত স্কয়ার, পৌর বিপণি, পুরাতন কোর্টসহ বিভিন্ন এলাকায় থাকা ভাসমান শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের হাতে খাবার তুলে দেন। 

খাবারের মধ্যে সপ্তাহে তিনদিন ভাতের সঙ্গে মাংস, ভাজি এবং এক বোতল পানি থাকে। আরও তিনদিন দেওয়া হয় ভাত, মাছ, সবজি। একদিন দেওয়া হয় ডিম আর ভাজি। একজনের খাবারে ব্যয় হয় ৭৫টাকার মতো। প্রতিদিন তাদের ব্যয় হয় প্রায় দুই হাজার টাকা।

জানা যায়, এই খাবার বিতরণ করতে গিয়ে রাস্তায় থাকা একজন অসহায় প্রতিবন্ধী অসুস্থ নারীর চিকিৎসাও করিয়েছেন তারা। ওই নারীর একটি পায়ের নিচের অংশ পচে গিয়েছিল। পায়ে পোকায় ধরে থাকায় কেউ তার কাছে যেত না। পরে তারা ওই নারীকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রায় ১৫দিন চিকিৎসার পর তিনি এখন মোটামুটি সুস্থ হয়েছেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে তাদের পরিবার খোঁজে পেয়েছে।

রুহেল আহমদ বলেন, ‘আমি ব্যবসার কারণে পুরো শহর ঘুরি। এসব মানুষদের প্রতিদিনই দেখি। করোনা ভাইরাসের কারণে যখন সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়, মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছিল না। তখন চিন্তা করি এই মানুষগুলোর কি হবে। সেই থেকে শুরু করেছিলাম। এখন অন্যরাও যুক্ত হয়েছেন।

জগন্নাথ বনিক বলেন, ‘শহরের রেস্তোরাঁগুলো খুলে গেলে এই ভাসমান মানুষগুলোর খাবারের সমস্যা অনেকটা মিটে যাবে। তবে যতদিন এটা না হয় ততদিন এরা খাবারা পাবে কোথায়। আমরা কতদিন চলিয়ে যেতে পারব জানি না। কয়েকদিন থেকে ঘোষণা দিচ্ছি কাল শেষ হবে। তখন কষ্ট হয়। কিন্তু কেউ না কেউ এগিয়ে আসায় এটি চলমান আছে। আমরা চাই সমাজের বিবেকবান মানুষ যেন এই অসহায় লোকগুলোর পাশে দাঁড়ান। তিনবেলা না হোক এই সংকটকালে অনন্ত একবেলা যেন এই অসহায় লোকগুলো খেতে পারে।’

এআই// আরকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি