করোনাক্রান্ত নারী চিকিৎসকের আক্ষেপ
প্রকাশিত : ১৩:২২, ৬ জুলাই ২০২০
করোনাক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কাউছার জাহান মনি।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার বাড়িতে খাবার পানি সংগ্রহে নিয়োজিত গৃহপরিচারিকা এখন আর তার ঘরে (ডা. মনি) পানি দিতে আসেন না। কারণ করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় প্রতিবেশীরা তাদের বাড়িতে খাবার পানি সরবরাহ করতে নিষেধ করেছেন। এতে পানির সংকটে পড়ে তার পরিবার।
তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ও আক্ষেপ প্রকাশ করে গত ৩ জুলাই নিজ ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাস দেন ডা. মনি। এতে প্রশাসনসহ সচেতন মহলে টনক নড়ে।
যেখানে তিনি লিখেন, ‘এক কলসি পানির দাম কত? এই মুহূর্তে মেলা দামি জিনিস এই এক কলসি বিশুদ্ধ খাবার পানি। পানি শেষ হতে লাগলে টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যায়, পানি এনে দেবে কে? আমার কাজের সাহায্যকারী প্রতিদিন পাশের বাড়ি থেকে পানি এনে দিত, এখন তাকে ফোন দিলেও ধরেনা। বহুবার ফোন দেওয়ার পর সে ফোন ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, আপা সন্ধ্যায় লুকায়া পানি এনে বাসার নিচে রেখে যাব। আমাদের পানি এনে দেয় বলে তাকে নাকি বাড়ির লোক আর পাড়াপ্রতিবেশী হেনস্তা করছে আর মারধরের হুমকি ধামকি দিচ্ছে.... ওফ... কি ভয়ানক অবস্থা।’
প্রিয় ভাই বোন, পাড়া প্রতিবেশী আমি কভিড-১৯ কে ভালোবেসে নিমন্ত্রণ জানিয়ে শরীরে নিয়ে আসিনি, আপনাদেরই কেউ অসুস্থ অবস্থায় সেবা নিতে এসে আমাকে দিয়ে গেছেন। অফিস টাইম শেষ হওয়ার পরও, পিপিই খুলে ফেলার পরও আবদার করে আপনারা পাড়া-প্রতিবেশীরাই আসেন সেবা নিতে। হাজারবার বলার পরও মাস্ক না পরে কোন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দাঁত কেলাতে কেলাতে আল্লাহর দোহায় দিয়ে আপনারাই রোগে-শোকে আসেন।
কেউ বলতে পারবেন কোনদিন কাউকে ফিরিয়ে দিয়েছি? শোনেন এই দুনিয়ায় সবকিছু ফেরত আসে। আল্লাহর দয়ায় যদি সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসি আমি কিন্তু আবারও আপনাদের সেবা দেব। সেটা সময়ে অসময়ে যখনই হোক না কেন। পরিশেষে এভাবে বলার জন্য কেউ যদি কষ্ট পান মাফ করে দিয়েন। কোনও অভিযোগও নেই শুধু এইটুকু বলি কষ্ট পেয়েছি ভীষণ।’
এমন স্ট্যাটাস নজরে পড়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল করিম জুয়েলের। তিনি আমেরিকায় অবস্থান করলেও তার ছোট ভাইকে দিয়ে ডা. মনির বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের পানীয় ও ফলমূল পাঠিয়েছেন।
একই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুপ্রভাত চাকমা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান, ওসি (তদন্ত) রবিউল হক ডা. মনির বাড়িতে ছুটে যান। তারাও বিভিন্ন ধরনের পানীয়, ফলমূল তার হাতে তুলে দেন। এসময় তার স্বাস্থ্যসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন তারা।
এআই/এসএ/
আরও পড়ুন