ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বেনাপোলে কাস্টম হাউজে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক রাজস্ব আদায়

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: 

প্রকাশিত : ১৭:২৩, ৬ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৭:২৪, ৬ জুলাই ২০২০

রাজস্ব আদায়ে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউজে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্ধেকের মতো রাজস্ব আয় হয়েছে দেশের বন্দরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়কারী এই কাস্টম হাউজে।

কাস্টম হাউসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৭০ কোটি ১২ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। তবে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, কাস্টমের নানা হয়রানির কারণে ব্যবসায়ীরা এ পথে আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় অর্থবছরের শুরুতেই রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে ছিল এ কাস্টম হাউজ। পরে করোনার কারণে ভারতের সঙ্গে টানা আড়াই মাস আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আহরণ নেমে যায় অর্ধেকে।

কাস্টম সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৬ হাজার ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বেনাপোল কাস্টম হাউজকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেওয়া হয় ৫ হাজার ৬০৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এসময় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কাস্টম কর্তৃপক্ষ আদায় করে মাত্র ২ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৩ লাখ  টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৭০ কোটি  ১২ লাখ টাকা। এসময় ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য।

এর আগেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি ছিল। এসময় লক্ষ্যমাত্রা  দেওয়া হয়েছিল ৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এসময় আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সেবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, আড়াই মাস এপথে আমদানি বন্ধ ছিল। এছাড়া আমদানি পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে রাজস্ব ঘাটতি আরো বেশি হয়েছে। এপথে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়ানো ও হয়রানিমুক্ত হতে হবে। এছাড়া বন্দরে বার বার রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে অনেক ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর কোনো ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় তারা এ বন্দর ছেড়েছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, পণ্য ছাড়করণের ক্ষেত্রে বৈধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় আমদানি কমে যাওয়া একটি কারণ। এতে রাজস্ব দিন দিন ঘাটতি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এছাড়া শুরু থেকেই রাজস্ব ঘাটতি হয়ে আসছে তাতে চলতি অর্থবছর শেষে বিপুল পরিমাণে ঘাটতি দাঁড়াবে। বার বার রাজস্ব ঘাটতির কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, চাহিদা অনুপাতে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া এবং উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পণ্য দ্রুত খালাসসহ ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ হওয়া সম্ভব।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেন রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, করোনার কারণে প্রথমত আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। এ ছাড়া পণ্য খালাসে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি বেড়ে যাওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। এতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে কাস্টম কর্মকর্তারা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন।

জানা যায়, কলকাতা থেকে বেনাপোলের দুরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। যোগোযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।  ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের পছন্দের তালিকায়ও প্রথম সারিতে  বেনাপোল বন্দর। দেশের সিংহভাগ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে। রাজস্ব আয়ের দিক থেকে চট্রগ্রাম বন্দরের পরেই বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে, যা থেকে সরকারের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। 

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি