ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

খামার থেকে গরু বিক্রির আশা খামারিদের

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:২৪, ৯ জুলাই ২০২০

আর কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকার দোহারের গরুর খামারিরা। উপজেলায় কোন প্রকার ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশিয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তারা। 

প্রতিবছর ঈদে দেশিয় গরুর চাহিদা ভাল থাকায় খামারিদের পাশাপশি পারিবারিকভাবে পালন করছেন কৃষকরাও। প্রতি বছর এসব সুস্থ গরু নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ আশেপাশের জেলাগুলোর হাটে বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন খামারিরা। তবে এবার করোনার কারণে খামার থেকেই গরুগুলো বিক্রির চিন্তা ভাবনা করেছেন খামারিরা।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে দোহার উপজেলায় দেশি জাতের প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা এসব গরুর কোরবানির বাজারে আলাদা কদর তৈরি হয়েছে। উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে গরুর রিস্টু পুষ্টুকরণ (মোটা তাজাকরণ) খামার রয়েছে ২৫০টি। এছাড়াও বড় ডেইরি ফার্ম রয়েছে ৭৪টি। উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৫০৭টি খামার রয়েছে। 

উপজেলার বিলাশপুরের খান, দোহার খালপাড় এলাকার রফ রফ, মা-বাবার দোয়া ও ভাই-ভাই ডেইরি ফার্ম ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পশুর যত্ন নিচ্ছেন খামারিরা। পশুগুলোকে রাখা হয়েছে শুষ্ক জায়গায়। ঘরের ভেতরে রয়েছে ফ্যান। খাওয়ানো হচ্ছে ঘাস, খড়, ভুসি ও খৈলসহ দেশিয় খাবার। গরু মোটাতাজাকরণে কোনো প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য খাওয়ানো হচ্ছে না বলে জানান খামারিরা।

কৃত্রিমতা ছাড়াই গরু হৃষ্টপুষ্ট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন খান ডেইরি ফার্মের মালিকরা। উপজেলার বিলাশপুর এলাকায় অবস্থিত খান ফার্মটির পরিচালক মো. রুবেল জানান, ‘আমরা গরুর খাবারের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নশীল। এখানে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ দেশিয় খাবার গরুকে খাওয়ানো হয়। সাধারণত গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, লালি-গুড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খেসারি, মাসকলাই, মটরের ভুসিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। এ নিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে ক্রেতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন না এবং এ ধরনের গরুর মাংস খেয়েও মানুষের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। মোটাতাজা করার জন্য কোন প্রকার রাসায়নিক খাবার দেয়া হয় না।’

তিনি আরও জানান, তাদের খামারে মোট ৮১টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে গাভি ২০টি, ষাড় ৪০টি ও বকনা ২১টি। এছাড়া ছাগল-ভেড়া মিলিয়ে রয়েছে ৪০টি। এসব গরুর আলাদা চাহিদা রয়েছে জানিয়ে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার গরুগুলো বাড়ি থেকে বিক্রি করা হবে। ইতোমধ্যে বেশ সাড়াও পেয়েছেন বলে জানান তিনি। 

মাংসের পাশাপাশি উপজেলার দুধের চাহিদাও পূরণ করছে খান ডেইরি ফার্ম। ২০টি গাভি থেকে দৈনিক প্রায় ১৫০ লিটার দুধ উৎপন্ন হয় বলে জানান খান রুবেল। এসব দুধ উপজেলার বিভিন্ন মিষ্টির কারখানার চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয়দের মাঝে সরবরাহ করা হয়। 

উপজেলার মধ্যে খান ডেইরি ফার্ম একটি আদর্শ ফার্ম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন বলে জানান উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের ভোটেরিনারি সার্জন ডা. শামীম  হোসেন। উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের সহযোগিতায় ফার্মটি গড়ে উঠেছে। 

২০১৮ সালে তারা সাত ভাই যৌথভাবে ১৪টি গরু নিয়ে নির্মাণ করেন খান ডেইরি ফার্ম। ছোট একটি সেডে ফার্মের কার্যক্রম শুরু হয়। মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে ৩টি সেডে বর্তমান গরু রয়েছে ৮১টি। মাত্র ১০ লাখ টাকা নিয়ে মূলধন শুরু করলেও তা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকায়। খামারে জার্সি, ফ্রিজিয়ান, শাহী ওয়াল, শংকর জাতের গরু রয়েছে। এখন খামারে তারা ৩ ভাই এবং ৪ জন কর্মচারী গরুগুলো পরিচর্যা করে থাকেন।

কয়েকজন খামারি জানান, গত বছর ও তার আগের বছরগুলোতে ঈদুল আজহা সামনে রেখে এ অঞ্চলের কিছু কিছু অসাধু মৌসুমি ব্যবসায়ী গরুকে মোটাতাজা করতে স্টেরয়েড জাতীয় নানা ওষুধ ব্যবহার করেছে। অস্বাধু উপায়ে গরু মোটাতাজা করতে গিয়ে গরু মরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে এবার খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ মনোযোগী হয়েছেন। এখন দোহারের বেশিরভাগ খামার মালিকরাই প্রাকৃতিক উপায়েই গরু মোটাতাজাকরণ করেন। তাদেরও প্রত্যাশা খামার থেকেই বিক্রি হয়ে যাবে গরুগুলো।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের ভোটেরিনারি সার্জন ডা. মো. শামীম হোসেন বলেন, ‘এ উপজেলার খামারিরা দেশিয় পদ্ধতিতে যত্ন নিয়ে গরু লালন পালন করছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা খামারগুলোতে পর্যবেক্ষক করা হচ্ছে। করোনার এমন দুর্যোগের মধ্যেও আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।’

এআই//এমবি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি