১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি-নির্যাতন, হত্যার হুমকি
প্রকাশিত : ১৯:৫৫, ১১ জুলাই ২০২০
দশ (১০) লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের পর বাড়ি থেকে বের দেয়া হয়েছে সারমিন আক্তার নামে এক গৃহবধূকে। স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে স্থানীয়ভাবে অনেক সালিশ বেঠক করেও কোন লাভ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন ওই গৃহবধূ। পুলিশ আসামী আব্দুল মমিনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠালেও এখন উল্টো মামলা তুলে নিতে ওই গৃহবধূসহ তার পরিবাররের সকলকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
নওগাঁর ধামইরহাটের এই ঘটনায় ওই গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে শনিবার থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৯ সালে পরিবারিকভাবে আগ্রাদ্বিগুণ ইউনিয়নের শাহাজাহান আলীর এমএ পাস মেয়ে মোছা. সারমিন আক্তারের বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী রামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আগ্রাদ্বিগুণ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মমিনের সঙ্গে। বিয়ের ৩ মাস পর যৌতুকলোভী স্বামী আব্দুল মমিন মোটরসাইকেল দাবি করে। তা না দিতে পারায় সারমিনের ওপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। গরীব বাবা শাহাজাহান আলী মেয়ের সংসারে সুখের কথা চিন্তা করে দেড় লাখ টাকায় একটি মোটরসাইকেল কিনে দেন। এর মাসখানেক পর আবারও স্ত্রী সারমিনের নিকট ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আব্দুল মমিন। যৌতুকের এত বড় অংকের টাকা দিতে না পারায় চলতি বছরের ২৯ মার্চ শশুর বাড়ির লোকজন মারপিট করে স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাকে। ওইদিন বাধ্য হয়ে শাহাজাহান আলী তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। স্বামীর সংসারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে এলাকায় একাধিকবার বৈঠক হলেও স্ত্রী সারমিনকে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বাধ্য হয়ে সারমিন স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে গত ২৫ এপ্রিল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশ আব্দুল মমিন ও তার পিতা আব্দুস ছাত্তারকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়।
সম্প্রতি শ্বশুর জামিনে বের হয়ে এসে তার কন্যা রওশন আরাকে সাথে নিয়ে সারমিনের বাবার বাড়িতে এসে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন সারমিন ও বাবা শাহাজান আলী।
গৃহবধূ সারমিন আক্তার জানান, আমার বাবা গরীর হওয়ায় ৪ ভরি সোনা ও দেড় লাখ টাকা এনজিও থেকে ঋণ করে দিয়েছেন আমার সুখে জন্য। কিন্তু কপাল খারাপ যে এমন স্বামী পেয়েছি! আমার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করলে নাকি ২৫ লাখ টাকা পাবে, তাই আমাকে তাড়াতে এই ‘নির্যাতন ও যৌতুক’ দাবি করেছে।
এ বিষয়ে আগ্রাদ্বিগুণ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেনজির আহমেদ জানান, যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা হওয়ায় সহকারী শিক্ষক আব্দুল মমিনকে ম্যানেজিং কমিটি সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
তবে অভিযুক্ত শশুর আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমাকে যখন জেল খাটতে হয়েছে, তাহলে সেই বউকে নিয়ে আমার ছেলে সংসার করবে কি না ভাবতে হবে। আর আমরা কোন টাকা পয়সা চাইনি বা হুমকিও দেইনি কাউকে।’
এ বিষয়ে ধামইরহাট থানার ওসি মো. আবদুল মমিন জানান, ঘটনার বিষয়ে ধামইরহাট থানায় চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল একটি মামলা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে ১নং আসামি এখনও হাজতে আছে। বাদীকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে নতুনভাবে অভিযোগ করে একটি জিডি দায়ের করেছে বাদী সারমিন আক্তার। হুমকির বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
এনএস/
আরও পড়ুন