এইচএসসির আগেই অনার্স পাস এমপি পাপুল!
প্রকাশিত : ১২:২০, ১২ জুলাই ২০২০
শহিদ ইসলাম পাপুল
মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের কারাগারে রয়েছেন লক্ষ্মীপুরের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। তিনি এইচএসসি’র আগেই স্নাতক (অনার্স) পাস করেছেন বলে অযৌক্তিক দাবি করেছেন। পাপুল জানিয়েছেন, ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে ১৯৯২ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। আবার সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন ১৯৮৭ সালে। তবে এসবে তিনি স্পষ্টতই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলেই জানা গেছে।
পাপুলের দাবি মতে, তিনি নিউইয়র্ক সিটি কলেজে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু আমেরিকায় পড়াশোনার কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি।
গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতার এইসব তথ্য দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর সদরের একাংশ) আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল। এদিকে, নির্বাচনের হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর উল্লেখ করলেও জমা দিয়েছেন স্নাতক পাসের সনদ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাপুল আসলে এসএসসি পাসও করেননি।
নির্বাচনী হলফনামায় পাপুল লিখেছেন, সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ অব এডুকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনমিকস-এ স্নাতক করেছেন তিনি। শিক্ষাবর্ষ ছিল ১৯৮৬-১৯৮৭। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, কলেজটিতে ওই বিষয় পড়ানোই হয় না।
এদিকে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই হলফনামার সঙ্গে পাপুলের জমা দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার ওই সনদ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র তিন দিন আগে ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ওই দিন শুনানি হয়নি।
ফয়েজ ভূঁইয়ার আইনহজীবী সালাহ উদ্দিন রিগান বলেন, পাপুল শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তার নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি হলফনামায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকার তথ্য দিয়েছেন কিন্তু জমা দিয়েছেন স্নাতক-এর সনদ। এই স্নাতক সনদটিও ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে তিনি এসএসসি পাসও করেননি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত হন। পাপুলের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়া সনদের বিষয়টি নিয়ে অবগত রায়পুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মামুনুর রশীদ।
তিনি বলেন, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে পাপুল লেখাপড়া করেননি। ১৯৮৭ সালের আগেই পাপুল চাকরির জন্য কুয়েত চলে যান। সে দেশে চাকরিরত অবস্থায় ১৯৮৭ সালে সিয়েরা লিয়ন গিয়ে লেখাপড়ার দাবি হাস্যকর। তিনি যেসব শিক্ষাগত সনদ সংগ্রহ করেছেন সেগুলোর শতভাগই ভুয়া।
মামুনুর রশীদ আরও বলেন, পাপুল তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাও মিথ্যা।
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুন মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে পাপুলকে গ্রেপ্তার করে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি। তিনি এখন দেশটির কারাগারে বন্দি। কুয়েতের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে পাপুলের নামে জমা থাকা বিপুল অর্থ জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) পাপুল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানব ও অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে।
এই শহিদ ইসলাম পাপুল নিজে এমপি, তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও এমপি। বাহ! কি দারুণ ব্যাপার, তাই না? স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আইন প্রণেতা! কিন্তু সেই আইন প্রণেতা হয়েও পাপুল একজন মানবপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এখন ভিন দেশের কারাগারে বন্দী। এক দেশের আইন প্রণেতা আরেক দেশের আইনের চোখে অপরাধী। এটা কি লজ্জা! নাকি দেশের বারোটা বাজানো?
এনএস/
আরও পড়ুন