বিপাকে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা, সরকারি সহায়তার অপেক্ষা
প্রকাশিত : ১৬:০৬, ১৪ জুলাই ২০২০

করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে যশোরের বেনাপোল-শার্শাসহ দেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও। স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা।
এতে করে ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ছুটি আরও দীর্ঘ হলে স্কুল টিকবে কী-না, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। আর বন্ধের মধ্যে মালিকরা বেতন দিতে না পারায় সরকারি সহায়তার দিকে চেয়ে আছেন শিক্ষকরা।
সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যশোরের বেনাপোল-শার্শার কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের পরিবারে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। এসব শিক্ষকদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে না আসায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে এ সমস্ত শিক্ষকদের।
বেনাপোল ও শার্শার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মিলে প্রায় ৫৬টি কিন্ডারগার্টেনে ৫ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োজিত রয়েছেন। এরা প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় পরিচালিত হয়। এমনকি শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। এটা দিয়ে আর প্রাইভেট টিউশনের ফি দিয়ে চলত শিক্ষকদের অস্বচ্ছল পরিবারের ভরণপোষণ।
কিন্তু করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বেতন বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে প্রাইভেট টিউশন। ফলে কোনোদিক দিয়েও তারা উপার্জন করতে পারছে না। পারছেন না মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে। এই মুহূর্তে সরকারিভাবে আর্থিক অনুদান ও সহজ শর্তে ঋণ পেতে অবস্থান ধর্মঘট ও মানববন্ধন করতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন তারা।
সম্প্রতি সারা দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা মানববন্ধন কর্মসূচিতে আপদকালীন সময়ে সরকার থেকে সহজ শর্তে ঋণ ও অনুদান প্রদান এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাধানসহ বেশ কিছু দাবি তোলেন। সেই সাথে আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।
বেনাপোলের গাজিপুর মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ থেকে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের আয়-রোজগারও। চার মাস হতে চলল সবার বেতন-ভাতা বন্ধ। কিন্তু প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা স্কুলের ঘর ভাড়া। সেটার জন্য বাড়িওয়ালা চাপ দিচ্ছেন। অভিভাবকদের কাছ থেকে স্কুলের বেতন আদায় করা যাচ্ছে না। স্কুলের ঘর ভাড়াও পরিশোধ করতে পারছি না। আমাদের বেতনতো দূরে থাক।’
বেনাপোল সানরাইজ স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. ইমামুল হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল বন্ধ। লকডাউনের কারণে প্রতিষ্ঠানের আয়-রোজগারও একদম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এসব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক অবদান রয়েছে। তাই করোনার এই দুর্যোগে সরকারের উচিত আমাদের সহায়তা করা। সরকারই আমাদের অভিভাবক। সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’
চেকপোস্ট আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইয়ানুর রহমান বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশ ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত। তাই মাসিক আয়ের ৪০ শতাংশ ঘর ভাড়া এবং ৪০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতায় চলে যায়। বাকি ২০ শতাংশ বা তারও বেশি গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ভর্তুকি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এসব প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখাই কঠিন হবে।’
কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের শার্শা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সোহারাব হোসেন জানান, ‘একদিকে যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে শত শত শিক্ষকরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।’
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা কোনো বেতন দিচ্ছে না। ওরা বেতন না দিলে তো শিক্ষকদেরও বেতন হবে না। তাছাড়া কেজি স্কুলের শিক্ষকরা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়না। এই দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় আমাদের পরিবারে হাহাকার বিরাজ করছে। অবিলম্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সরকারি অনুদান এবং সহজ শর্তে ঋণ একান্ত ভাবে আবেদন করছি।’
শার্শা উপজেলা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অফিসার রাজমনি বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অর্থনৈতিক সহায়তার বিষয়ে আমাদের কোনও পরিকল্পনা নেই। আমরা সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু করেছি। এখন মোবাইল, রেডিও ও অনলাইন এই তিনটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যেন সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পারি, সে বিষয়ে কাজ করছি।’
এআই//এমবি
আরও পড়ুন