সুনামগঞ্জে আবারও বন্যার পূর্বাভাস
প্রকাশিত : ১৬:১৩, ১৬ জুলাই ২০২০
সুনামগঞ্জে পর পর দুবার বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও বন্যার পূর্বাভাস দিল সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত তিনদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি না বাড়লেও আজ বৃহস্পতিবার থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। পাউবোর আবারও বন্যার পূর্বাভাসে আতঙ্ক বিরাজ করছে হাওরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মাঝে।
সুনামগঞ্জে পাউবো জানায়, আগামী ২০/২১ জুলাই হতে পুনরায় জেলার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বৃদ্ধির এই প্রবণতা ৪/৫ দিন স্থায়ী হতে পারে এবং সে সময়ে জেলার সুরমা, কুশিয়ারা ও যাদুকাটা নদীর পানি সমতল কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এর ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং অনেক জায়গায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে সুনামগঞ্জে পাউবো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে এ তথ্য আপলোড করেছে।
জানা যায়, ভারতের মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল ও সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে দ্বিতীয় বারের মতো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ কারণে জেলায় তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারা বাজার, জগন্নাথপুরসহ ১১টি উপজেলায় জেলা শহরসহ নিন্মাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে, কমিউনিটি ক্লিনিকে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে সকল চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।
আর পাহাড়ি ঢলে নদীর তীরবর্তী গ্রাম ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে ও নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এছাড়াও জেলার ছোট বড় পাচঁ শতাধিক হাট বাজার, উপজেলা পরিষদসহ অভ্যন্তরীণ প্রতিটি সড়ক পানিতে প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ ও ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছে। পানি বৃদ্ধি আর ঢেউয়ের কারণে জেলার হাওর পাড়ের সাত হাজারের অধিক ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। বসত ঘরে পানিতে ডুবে যাওয়ায় গবাদি পশু আর গো-খাদ্য (খড়) নিয়েও বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক পরিবার।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার জহিরুল আলম জানান, ‘সুনামগঞ্জে বন্যায় ১ লাখ ৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৩৩টি পরিবার রয়েছে। এ পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৮৬৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৪৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ১ হাজার ৯০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ২ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ২ লাখ টাকার গো-খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
পরিবেশবিদ ও সচেতন মহল বলছেন, ভারতের মেঘালয়, চেরাপুঞ্জি এলাকায় পাহাড়ি বন, গাছ নির্বিচারে ধংস করা হচ্ছে, তৈরি করা হচ্ছে সড়ক ও উন্নয়ন কাজ। ফলে সেখানে বৃষ্টি হলেই বাংলাদেশের ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল বিনা বাধায় সরাসরি চলে আসে। সেই সাথে প্রতিবছরের বন্যায় পলি জমে কমছে হাওরের নাব্যতা। উজানের পাহাড়ি বন বাঁচাতে না পারলে আগামীতে এই জেলার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই পাহাড়ি ঢলে থেকে বাচঁতে ও পরিবেশ রক্ষায় দুদেশে এখনি প্রয়োনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন সবাই।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন,‘গত সোমবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কমতে শুরু করেছে জেলার সুরমার পানি। তবে হাওরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। নতুন করে আগামী ২০/২১ জুলাই থেকে পুনরায় জেলার প্রধান নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
প্রতিটি উপজেলায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে জানান সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ।
তিনি বলেন,‘প্রশাসনের সবাই বন্যার্তদের সহায়তায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া আমাদের কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে। যে কোনো প্রয়োজনে সেখানে আমাদের জানালে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানকারী ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে শুকনো খাবার, জিআর চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’
এআই//এমবি
আরও পড়ুন