সাপটা জটিলতায় বেনাপোলে আটকা পড়েছে অনেক পণ্য
প্রকাশিত : ২৩:১৩, ২১ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ২৩:১৪, ২১ জুলাই ২০২০
সাফটা চুক্তির আওতায় ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট অব অরজিন এ ডিজিটাল স্বাক্ষর কপি গ্রহণ না করায় দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টমসে বেশ কিছু পণ্য আটকা পড়ে আছে। ২১ দিন পার হয়ে গেলেও এ ব্যাপারে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সময় বৃদ্ধি না করার ফলে গত ১ জুলাই থেকে সাফটা চুক্তির অধীনে আমদানিকৃত পণ্য ডিজিটাল স্বাক্ষর কপি দিয়ে ছাড় দিচ্ছে না বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর ফলে দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ও বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা আমদানিকৃত এসব পণ্য চালান খালাস করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই ব্যবসা প্রায় বন্ধের পথে অন্যদিকে আমদানি পণ্য খালাস করতে না পেরে দিন দিন বন্দরের গুদাম ভাড়া বেড়েই চলছে। তারপর রয়েছে ঈদের ছুটি। আমদানিকৃত এসব পণ্য চালান কবে ছাড় হবে তা নিয়েও দু:চিন্তায় রয়েছে আমদানিকারকরা।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, সাফটা (সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া) সুবিধার আওতায় পণ্য আমদানিতে বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো যে দেশ থেকে পণ্য আসবে সে দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরযুক্ত অরজিনাল কপি আমদানিকারককে স্ব-স্ব কাস্টমস হাউজে অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে দাখিল করতে হবে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনলাইনেও একটি স্বাক্ষরযুক্ত কপি পাঠাতে হবে। এতদিন এভাবেই পণ্য চালান খালাস হচ্ছিল বিভিন্ন কাস্টমস হাউজ থেকে।
বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে বিভিন্ন অফিস আদালতের কার্যক্রম অনলাইনে চলছে। সে কারণে ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ৭ এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে একটি পত্র দিয়ে সে দেশ থেকে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট অব অরজিন এ ডিজিটাল স্বাক্ষরযুক্ত অথবা স্বাক্ষরবিহীন ইলেকট্রনিক্যালি গ্রহণ করতে অনুরোধ জানান। সেটা ৩০ জুন পর্যন্ত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। সেই চিঠির আলোকে বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৭ এপ্রিল এক পত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিষয়টি জানান।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও চুক্তি) আকতার হোসেন স্বাক্ষরিত সকল কাস্টমস হাউজে পাঠানে পত্রে জানানো হয় বর্তমানে করোনা প্রার্দুভাবের কারণে দাপ্তরিক কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ থাকায় কোন কোন দেশ সাপটা চুক্তির আওতায় মূল সার্টিফিকেট অব অরজিন ইস্যু করতে পারছে না। তবে এর পরিবর্তে ডিজিটাল স্বাক্ষরযুক্ত অথবা স্বাক্ষরবিহীন সার্টিফিকেট অব অরজিন ইলেকট্রনিক্যালি ইস্যু করা হচ্ছে। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে সাপটা চুক্তির আওতায় শুল্কায়নকালে মূল সার্টিফিকেট অব অরজিন দাখিল করা না হলে এর পরিবর্তে ডিজিটাল স্বাক্ষরযুক্ত অথবা স্বাক্ষরবিহীন সার্টিফিকেট অব অরজিন গ্রহণপূর্বক পণ্য চালান সমূহ সাময়িক শুল্কায়ন করে খালাস প্রদানের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। তবে পত্রে জানানো হয় এই আদেশের কার্যকারিতা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
এই পত্রের আলোকে ৩০ জুনের মধ্যে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট অব অরজিন এর মাধ্যমে পণ্য চালান খালাস হচ্ছিল। ৩০ জুনের পরে ইস্যুকৃত কোন সার্টিফিকেট অব অরজিন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করছে না। যে কারনে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট পণ্য খালাসে মারাত্মকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ইতোমধ্যে ভারত থেকে আমদানিকৃত বেশ কিছু পণ্য বেনাপাল বন্দরে আটকে আছে। যার ফলে বিভিন্ন আমদানিকারকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, এটা বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রনালয় যদি আবারো সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানান অবশ্যই এই মহামারির সময়ে সময় বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এনবিআরকে একটি পত্র দিলে এনবিআর সেটা বাড়িয়ে দেবে। যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রনালয় একটি তারিখ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং তারই আলোকে এনবিআর ওই চিঠি ইস্যু করেছেন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, এ বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারের সাথে কথা বলেছি। আসলে এনবিআরের চিঠিতে স্পষ্ট করে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় সীমা বেধে দেওয়া আছে। এখন আমদানিকারক বা রফতানিকারক বা এফবিসিসিআই যদি বিষয়টি হস্তক্ষেপ করে তাহলে দ্রুত সমাধান হতে পারে। ভারতে এখনো অনেক স্থানে লকডাউন রয়েছে। সে কারণে অফিস বন্ধও রয়েছে। সে হিসেবে সময় বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।
তিনি আরও জানান, সর্বশেষ আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ২০ জুলাই ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার ও কলকাতাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনারকে বিষয়টি সমাধানের জন্য ইমেইল এর মাধ্যমে পত্র পাঠানো হয়েছে।
কেআই/
আরও পড়ুন