স্বর্ণের লোভেই দোহারে তপন হত্যাকাণ্ড: পুলিশ সুপার
প্রকাশিত : ১৮:০৪, ২২ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৮:১০, ২২ জুলাই ২০২০
ঢাকার দোহার উপজেলার পূর্ব লটাখোলা এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী তপন কর্মকার (৪৫) হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। বুধবার (২২ জুলাই) দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের জানান, মূলত ২ কেজি স্বর্ণের লোভে তপন হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তপনের পরিবারের এক সদস্যের সহযোগিতায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে সাংবাদিকদের জানান পুলিশ সুপার। ডাকাতির উদ্দেশ্যে বাড়িতে প্রবেশ করলেও দুর্বৃত্তরা ডাকাতি করতে না পেরে তপনকে কর্মকারকে হত্যা করে বলে জানান তিনি।
মারুফ হোসেন সরদার জানান, মামলাটি আলোচিত হওয়ায় আমরা আমাদের ডিপার্টমেন্টের দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে এই মামলার তদন্ত কাজ শুরু করি। যে কারণে ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যেই পাঁচজন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি জানান, এ হত্যাকান্ডের সাথে সাতজন আসামী সম্পৃক্ত রয়েছে।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার জানান,তপন কর্মকার যেহেতু পেশায় একজন স্বর্ণকার। তাঁর বাড়িতে ২ কেজির মতো স্বর্ণ আছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওই পরিবারের এক সদস্য তাঁর নিকট আত্মীয়ের সহায়তায় মূলত ডাকাতির পরিকল্পনা করে। এই ডাকাতিতে যারা অংশগ্রহণ করবে তারা প্রত্যেকে তিন লাখ টাকা করে পাবে বলে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। এই কাজে দুস্কৃতিকারীরা দা ও ধাঁরালো অস্ত্র ব্যবহার করে।
ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে তপনের পরিবারের ওই সদস্য বাড়িতে প্রবেশের প্রধান ফটক খুলে দিলে ডাকাতরা রাত গভীর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এরই মধ্যে তপনের বড়ভাই কৃষ্ণ কর্মকার ঘর থেকে দেখেন বাড়িতে অপরিচিত লোকের আনাগোনা। তখন সে চিৎকার দিলে তপন কর্মকার ঘর থেকে বের হয়ে আসে। এসময় তপন কর্মকার একজনকে জড়িয়ে ধরে ফেললে তাকে ছুড়ি ও ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ পরিস্থিতিতে তারা ডাকাতি না করেই চলে যায়। ঘটনায় সহযোগিতা করা তপনের পরিবারের ওই সদস্য ঘটনা থেকে নিজেকে আড়াল করতে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনার সাথে সাতজন আসামী জড়িত। আমরা ইতোমধ্যে মূল আসামীসহ ৫ জনকে আটক করেছি। বাকী দুইজনকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করি শিঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে। যেহেতু তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান,তাই এখনই বিস্তারিত বলা যাবে না। এতে তদন্ত ব্যাহত হতে পারে। যেহেতু এটি একটি আলোচিত ঘটনা তাই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সাথে তপনের পরিবারের যে সদস্যের নাম উঠে এসেছে তিনি হলেন তপনের বড় ভাইয়ের স্ত্রী মনি কর্মকার (৩৫)। নিজের অপরাধ ঢাকতে অপহরণের নাটকসহ নানা কৌশলের আশ্রয় নেন ওই নারী। এ ঘটনায় তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া গ্রেফতারকৃত পাঁচজন হলেন, নিহত তপনের বৌদি মনি কর্মকারের বোন জামাই ভোলানাথ ওরফে হৃদয় (৪৬), প্রেমানন্দ হালদার (৩০), সাধু বিশ্বাস (৩৫), সবুজ চন্দ্র বিশ্বাস (৩০) ও আলী মিয়া (৩২)। এর মধ্যে ভোলানাথ ও প্রেমানন্দের বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা গ্রামে। সম্পর্কে তাঁরা মামা-ভাগিনা। এছাড়া সাধু বিশ্বাসের বাড়ি দোহার উপজেলা অরঙ্গাবাদ গ্রামে, সবুজ বিশ্বাসের বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলার কান্দাবাড়িল্যা গ্রামে এবং আলী মিয়ার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার পূর্ব লটাখোলা এলাকায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী তপন কর্মকার’কে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এসময় ওই ব্যবসায়ীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী মনি কর্মকারকে তুলে নিয়ে যায় তারা। বুধবার দুপুর ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। ওই দিনই সকালে বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে মনি কর্মকারকে উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
কেআই/
আরও পড়ুন