শেরপুরে জোর করে অন্যের বালু বিক্রির অভিযোগ
প্রকাশিত : ২০:৪৫, ২২ জুলাই ২০২০
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বালুমহাল থেকে বৈধ এক ইজারাদারের উত্তোলন করে মজুদ করা বালু বিক্রি করে দিচ্ছেন অন্য বালু মহালের ইজারাদার এমন অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২২ জুলাই বুধবার দুপুরে উপজেলার চারআলী বাজারে ওই অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন নাকুগাঁও, কালাকুমা ও হাতিপাগার মৌজার বালুমহালের ইজারাদার এবং মেসার্স আল আমিন ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম। সেইসাথে তিনি তার ইজারা নেওয়া ওইসব বালুমহালের উত্তোলনকৃত ও মজুদকৃত বালু স্থিতাবস্থায় রাখার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, গত ১৪২৬ বাংলা সনের ভোগাই নদীর বালু মহালের অন্তর্গত নাকুগাঁও, কালাকুমা ও হাতিপাগার মৌজাসহ ৯টি মৌজার ২৬.৯০ একর বালুমহাল এক বছরের জন্য ইজারা নেন মেসার্স আল আমিন ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম। ইজারা প্রাপ্তির পর নিয়মমাফিক ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল ৯টি মৌজার বালুমহাল বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সীমানাসংক্রান্ত ও মৌজা জটিলতার কারণে প্রায় ৫ মাস পর ২৬ আগস্ট বালু মহাল ওই ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেয় প্রশাসন। এছাড়া ৯টি মৌজার মধ্যে নাকুগাঁও, কালাকুমা ও হাতিপাগার বালুমহাল ৩টি দুর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সংযোগ সড়ক তৈরি করে বালু উত্তোলন শুরু করা হলেও সড়ক ও জনপথের রাস্তা সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় বালু বিক্রি ও পরিবহন বন্ধ থাকে। এতে ওই ৩ বালুমহালে উত্তোলিত প্রায় ৩০ লক্ষ ঘনফুট বালু মজুদ থাকে।
এরপর দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাব শুরু হলে লকডাউন ও সাধারণ ছুটির কারণে মজুদকৃত বালু পরিবহন ও বিক্রয় করা সম্ভব হয়নি। পরে চলতি বছরের ১২ মে জেলা প্রশাসককে ইজারাদারের আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে আল আমিন ট্রেডার্স (ভিসি-১৭৯/২০২০)। ওই রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত ৬ জুলাই ওই বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়।
ওই নির্দেশনা মোতাবেক ১৬ জুলাই দিন নির্ধারণ করে গত ১৪ জুলাই একটি চিঠি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজারাদারকে অবগত করা হয়। পরবর্তীতে ১৪২৭ সনের ভোগাই নদীর বালুমহালের ফুলপুর, আন্ধারুপাড়া, কেরেঙ্গাপাড়া ও মন্ডলিয়াপাড়া- এ ৪টি মৌজা ইজারা পায় ময়মনসিংহের মেসার্স ইলিয়াস এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু ইলিয়াস এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ ইলিয়াস তার ইজারার ওই ৪টি বালুমহালের বালু বিক্রি করে টোল আদায় করার পাশাপাশি আল আমিন ট্রেডার্সের ইজারার ৪টি বালুমহালের উত্তোলিত ও মজুদকৃত বালুর টোলও আদায়
করছেন।
এদিকে আল আমিন ট্রেডার্সের ইজারা নেওয়া বালু মহালের উত্তোলিত বালু আত্মসাত করতে হাইকোর্টে শহিদুল ইসলামের করা রিট পিটিশনের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করেন মোঃ ইলিয়াস। ওই আপীলের প্রেক্ষিতে চেম্বার জজ গত ২৩ জুনের আদেশ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই স্থগিতাদেশ পাওয়ার পরেও ইলিয়াস এন্টারপ্রাইজের লোকজন অবৈধভাবে আল আমিন ট্রেডার্সের মজুদকৃত বালু বিক্রি করে টোল আদায় করে যাচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে আল আমিন এন্টারপ্রাইজ।
আল আমিন ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ইজারার মেয়াদ থাকা স্বত্ত্বেও আমি হাইকোর্টের আদেশ মেনে বালু উত্তোলন ও বিক্রি-পরিবহন বন্ধ রেখেছি। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইলিয়াস এন্টারপ্রাইজের লোকজন অবৈধভাবে আমার উত্তোলিত বালুও
বিক্রি করছে। তারা যাতে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকারিয়া, উপজেলা ট্রাক চালক-শ্রমিক ইউনিয়নের
সভাপতি হারুন অর রশিদ, নয়াবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। আর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তোফায়েল আহমেদ বলেন, সার্বিক অবস্থা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। তিনিই ওই বিষয়ে কথা বলবেন।
আরকে//
আরও পড়ুন