এনায়েতপুরে থামছেই না যমুনার বালু লুট
প্রকাশিত : ২০:০৮, ২৩ জুলাই ২০২০
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন থামছেই না। কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় যমুনাকে সারা বছর কয়েকটি চক্র বিভিন্ন ড্রেজার দিয়ে অর্ধশত কোটি টাকার বালু তুলে বিক্রি করে ক্ষত-বিক্ষত করছেই। মাঝে-মাঝে অভিযান চললেও মোবাইল কোর্টে সামান্য জরিমানায় আবারো সক্রিয় হচ্ছে অসাধু চক্র।
এদিকে বাধের জিও ব্যাগ ফেলার ঠিকাদারী ও ‘র্যাব-আরসি আনলোড ড্রেজার, সেনাবাহিনীর কাজে নিয়োজিত’ ড্রেজারের সাথে লিখে প্রতারনার নতুন কৌশলে যমুনা নদীতে থেকে প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। এজন্য বাক্ষ্মনগ্রাম, আরকান্দি, ঘাটাবাড়ি ও পাকড়তলা গ্রামে নদী ভাঙ্গন ব্যাপক আকার ধারন করায় এলাকাবাসী অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। বার-বার নিষেধ অমান্য করে প্রভাব খাটিয়ে বালু উত্তোলন করায় এলাকাবাসীর সাথে বালু দস্যুদের সংঘর্ষের আশংকা করছে স্থানীয়রা। জেলা প্রশাসন ও র্যাবের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহনের কথা জানিয়েছে।
এলাকাবাসী ও জেলা প্রশাসকের বরাবর পাঠানো অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, চৌহালী উপজেলার সদিয়াচাঁদপুর এবং স্থল ইউনিয়নের যমুনা নদী থেকে অন্তত ১০/১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র গত প্রায় ২৫/৩০ বছর ধরে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন ব্যবসার সাথে জড়িত। উপজেলা প্রশাসনের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মচারীদের সাথে যোগসাজোশে বছরে অন্তত অর্ধশতাধিক কোটি টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অনেকের এ ব্যবসার সাথে জড়িত থেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে রুপান্তর হয়েছে। বর্তমানে এই বালু উত্তোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বালু দস্যুরা। সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের মহেশপুরের
মেম্বর লালমিয়া হোসেনের নেতৃত্বে গত দু ৩ মাস আগে আনা হয়েছে সুবিশাল ৫টি ড্রেজার।
এই ড্রেজার দিয়ে যমুনার মাঝ নদী সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়নের উড়াপাড়া, মৌহালী, ইজারাপাড়া, স্থল ইউনিয়নের সন্তোষা, পাশের শাহজাদপুর উপজেলার আড়কান্দি, ঘাটাবাড়ি, শক্তিধরপুর সহ আশাপাশের এলাকা থেকে দিনভর তোলা হচ্ছে বালু। প্রতিদিন গড়ে দেড় লক্ষাধীক ঘনফুট বালু তুলছে এখান থেকে। যা বিক্রি হচ্ছে নদীর পশ্চিম পাড়ের এনায়েতপুর ঘাটের দুটি স্থানে সহ বিভিন্ন এলাকায়। তবে পাউবোর সহযোগীতায় এনায়েতপুর স্পার বাধ সহ নদী শাসনের কাজে বালু ভর্তি জিও টেক্স ফেলতে বালু তোলার নাম ও ড্রেজারের গায়ে ‘জধন-জঈ আনলোড ড্রেজার, সেনা বাহিনীর কাজে
নিয়োজিত’ লিখে নদীতে থেকে অবৈধ ভাবে জোড় খাটিয়ে বালু তুলে বিক্রি হচ্ছে অন্যত্র।
গত মাস খানেক আগে যমুনার সন্তোষা এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি সহ এক লাখ টাকা জরিমানা করে। তখন জব্দ করা হয়নি ড্রেজার, এনায়েতপুর ঘাটে স্তুপ করে রাখা কোটি টাকার বালু সহ আনলোড ড্রেজার। এ ৭ দিন যেতে না যেতে আবারো ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে দিনে ৫/৬ লাখ টাকার বালু যমুনার ঐসব এলাকা থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছে চক্রটি।
বর্তমান নদীর মাঝ খানে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পশ্চিম দিকে ধাবিত হচ্ছে। পানি আঘাত হানছে পশ্চিম পাড়ের এনায়েতপুর স্পার বাধ ও দেশের বৃহৎ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তীরে। যা বর্তমানে হুমকীর মুখে পড়েছে।
এছাড়া একই কারনে প্রচন্ড স্রোতে এনায়েতপুরের বাক্ষ্মনগ্রাম, আরকান্দি, জালালপুরে ভাঙ্গন আরো তীব্রতর আকার ধারন করছে। তাই আতংকৃত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। এ অবস্থায় ক্ষুব্দ স্থানীয়রা ড্রেজারটিতে লাঠি-সোটা নিয়ে বন্দ করে দেয়। তবে বালু বিক্রি ও তোলা অব্যাহত থাকায় এলাকাবাসীর পক্ষে খুকনী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আফাজ উদ্দিন ব্যাপারী জেলা প্রশাসন বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এছাড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও অনুলিপি দেয়া হয়েছে। এতে তিনি দ্রুত ড্রেজার বন্ধ করার দাবী জানিয়ে উল্লেখ করেছেন, মহেশপুর গ্রামের সন্ত্রাসী লালমিয়ার নেতৃত্বে বালু দস্যুদের ড্রেজারে মাটি তোলার কারনে অসংখ্য ঘর-বাড়ি ও আবাদী জমি ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে। তারপরও হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতাল, হাট, অনেক ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটায়।
এ ব্যাপারে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন কারী সদিয়াচাঁদপুরের মেম্বর লাল মিয়া সাথে তার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
র্যাব-সেনাবাহিনীর নাম ব্যাবহার করে বালু উত্তোলনের বিষয়ে র্যাব-১২ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম পিএসসি জানান, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ জানান, অভিযোগটি এখনো হাতে পাইনি। সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের অবহিতের মাধ্যমে দ্রুত অবৈধ ভাবে মাটি উত্তোলনকারী ড্রেজার পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আরকে//
আরও পড়ুন