দোহার-নবাবগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
প্রকাশিত : ১৮:২৯, ২৬ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৮:৩১, ২৬ জুলাই ২০২০
পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দি লাখো মানুষ। দোহার-নবাবগঞ্জ-মানিকগঞ্জ রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন ২৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কালিগঙ্গা নদীর তীব্র স্রোতে নদী গর্ভে চলে গেছে বহু ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। উপজেলার সাদাপুর খালে ভাঙনে বিলিত হচ্ছে বসত বাড়ি। ইতিমধ্যে ভাঙন রক্ষায় প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। এছাড়া দোহারে ছয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মার তীরবর্তী নবাবগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের তিতপালদিয়া,পানিকাউর, কঠুরি, আশয়পুর, রায়পুর, ঘোষাইল, কেদারপুর, আর ঘোষাইল, রাজাপুর, বালেঙ্গা, কান্তারটেক, খাটবাজার, নয়াডাঙ্গী, চারাখালী ও পশ্চিম সোনাবাজু এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকট। নিরাপদ পানির অভাব থেকে পানিবাহিত নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া সৃষ্টি হয় যোগাযোগ সংকটও। নৌকা নিয়েও যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দোহার-নবাবগঞ্জ-মানিকগঞ্জ রক্ষা বাঁধ। পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে উপজেলার হাজার হাজার পরিবার। ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছে স্থানীয় কৃষক। বিশেষ করে হঠাৎ পানি এত বৃদ্ধি পাওয়ায় পাট চাষিরা রয়েছে বিপদে। পানি নিচে রয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদ এবং হাট-বাজার। গত এক সপ্তাহ কালিগঙ্গার ভাঙনে শোল্লা ইউনিয়নের পাতিলঝাপ গ্রামের ১৫টি, খতিয়ার ৮টি, চকোরিয়ার ৫টি ও কোন্ডা গ্রামের ৭টি বাড়ি নদীর গর্ভে চলে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এছাড়া দোহার উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে নয়াবাড়ি, মাহমুদপুর, বিলাসপুর, সুতারপাড়া , নারিশা ও মুকসুদপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি। মিনি কক্সবাজারখ্যাত মৈনট ঘাট এলাকাটি পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন পর্যটন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এছাড়া উপজেলার ধোয়াইর বাজারসহ পূর্ব ও পশ্চিম ধোয়াইর গ্রামের বেশির ভাগ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নারিশা ইউনিয়নের মেঘুলা বাজার, বিলাসপুরের মধুরচর, রানীপুর, কৃষ্ণদেবপুর, রাধানগর, মাহমুদপুরের নারায়ণপুর, হরিচন্ডি ও মুকসুদপুরের পদ্মাতীরবর্তী অঞ্চলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব অঞ্চলের মানুষ ঈদ উদযাপনের বদলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পদ্মানদী তীরবর্তি এই মানুষগুলো প্রাণ বাঁচতে ও জীবনধারনের জন্য অন্যত্র সরে যাচ্ছে। উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকসহ ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। দোহার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার কঠুরী গ্রামের বাসিন্দা শওকত আলী বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পানি অনেক বেশি। পরিবার ও গরু-ছাগল নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। তবে এখনো সরকারি বা ব্যক্তিগত কোন সহযোগিতা পাইনি।
একই এলাকার মেহেরজান বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমার স্বামী দিনমজুরের কাজ কইরা সংসার চালায়। করোনার কারনে ৪ মাস ধরে কাজ বন্ধ। তার মধ্যে বন্যার পানি সব ডুইবা গেছে। বলতে পারেন না খেয়েই কোন মতে পুলাপান নিয়ে বাইচা আছি।
রায়পুর গ্রামের দেবদাস মনি বলেন, পানি ঘর ডুবে গেছে। বৌ-পুলাপান শশুর বাড়ি দিয়া আইছি। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে এখন আর বাড়িতে থাকা যাইবো না। অন্য একজনের বাড়ি থাকুম আইজ।
দেবদাসের বাবা হরিদাসী মনি ও মা শিবনাথ মনি বলেন, পরিবারে ৭ জন মানুষ। করোনার কারনে সবার কাজ বন্ধ খুব কস্টে দিন যাইবার লাগছিল। এক মাস ধরে বন্যার জল মধ্যে আছি। ঘরে মাচা পাইত্যা ছিলাম। বাঁশটা পচে গেছে। আজ আর থাকা যাইবো না। তার মধ্যে পোঁকা মাকড়ের ভয়। তাই বৌ ও নাতিদের বাপের বাড়ি পাঠাইছি।
শোল্লার পাতিলঝাপ এলাকার মনোয়ারা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর দিনমজুরের কাজ করে বাড়িটি করেছিলাম। কিন্ত সর্বনাশা কালিগঙ্গা সব নিয়া গেল। ঘর বাড়ি সব নদীর পেটে। একটি জমি বাকি আছে। ২/১ দিনের মধ্যে ঐটা চলে যাবে। আল্লাহ আমারে মন দিল না কেন? নিজের কস্টের সম্পত্তি চোখের সামনে শেষ হয়ে গেল।
শোল্লা ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ার তুহিনুর রহমান বলেন, শোল্লা ইউনিয়নের প্রায় ২ একর জমি নদীর গর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ঠিকাতে আপাতত জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অভিভাবক সালমান এফ রহমান এমপি মহোদয় আশ্বস্ত করেছে দ্রুত ভাঙনরোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, পদ্মার পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আমার ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখানে ভয়াবহ অবস্থা। রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেছে। মানুষজন অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছে।
কেআই/
আরও পড়ুন