পাঁচ টাকায় ঈদবাজার, খুশি শিশু-কিশোররা
প্রকাশিত : ১৩:১১, ৩০ জুলাই ২০২০
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। তবে করোনার ধাক্কায় গেল ঈদুল ফিতরের পাশাপাশি এবার পবিত্র ঈদুল আযহায়ও চারিদিকে আনন্দ-আয়োজন একটু কমই। বিশেষ করে অসহায় ছিন্নমূল মানুষের মাঝে এর প্রভাব আরও বেশি। তবে এইসব শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন এক উদ্যোমী তরুণ।
পাঁচ টাকার বিনিময়ে অসহায় শিশুদের হাতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নতুন পোশাক তুলে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ। বুধবার (২৯ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের মুস্তারী কমপ্লেক্স চত্বরে ১২৫ জন শিশু-কিশোরের মাঝে এই পোশাক তুলে দেয়া হয়।
ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, জিন্সপ্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট এবং মেয়েদের সলোয়ার-কামিজসহ বিভিন্ন ধরণের পোশাক দেয়া হয়েছে। নড়াইল শহরের বিভিন্ন এলাকার শিশুরা পাঁচ টাকার বিনিময়ে পোশাকগুলো কিনেছে।
নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকার শিশু রিয়া (৭) জানায়, ‘পাঁচ টাকায় নতুন পোশাক কিনব ভাবা যায় না। সতেজ ভাই আমাদের এই সুযোগ করে দিয়েছেন।’
শিবশংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী খাদিজা ও পঞ্চম শ্রেণির জাকিয়া জানায়, ‘পাঁচ টাকায় নতুন পোশাক পেয়ে ঈদের আগে আরেক ঈদ আনন্দ।’ মাদরাসা শিক্ষার্থী অনিক মোড়ল বলে, ‘ঈদে নতুন পোশাক পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। প্রথমে ভাবতে পারিনি পাঁচ টাকায় ভালোমানের নতুন পোশাক পাব। ’
নারীনেত্রী নাসিমা রহমান পলি বলেন, ‘তরুণ উদ্যোক্তা মির্জা গালিব সতেজ সব সময় অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পাশে আছেন। করোনার শুরু থেকে ৫ শতাধিক অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। এছাড়া বিনামূল্যে সবজি বাজার, গরিব কৃষকের বোরো ধান কর্তন, শিশুদের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, রোজায় ইফতার বিতরণ, ১০০ শিশুকে নতুন পোশাক, ২০০ শিশুর মাঝে গাছের চারা, বাড়ি বাড়ি বৃক্ষরোপণ, ৫০ জন দরিদ্র মেধাবীর মাঝে শিক্ষা উপকরণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন সতেজ। তার পাশে থেকে সবসময় উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করি।’
নড়াইল প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক সুলতান মাহমুদ বলেন, তরুণ প্রজন্মের ছেলে হিসেবে মির্জা গালিব সতেজ সবসময় পজিটিভ কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ যেন। অন্য তরুণদেরও এমন ভালো কাজে এগিয়ে আসা উচিত।’
মির্জা গালিব সতেজ বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য নিজেকে তুলে ধরা নয়। আমার মতো তরুণদের ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, উবুদ্ধ করাই আমার উদ্দেশ্য। এরই ধারাবাহিতকায় করোনার শুরু থেকেই অসহায় মানুষের পাশে আছি। প্রায় দুই মাসব্যাপী ৫ শতাধিক অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি, বিনামূল্যে সবজি চালু, শিশুদের নতুন পোশাক ও গাছের চারা বিতরণ, বাড়ি বাড়ি বৃক্ষরোপণ, দরিদ্র মেধাবীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করেছি। এরই ধারাহিকতায় ঈদুল আযহা উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাঁচ টাকার বিনিময়ে ১২৫ জন শিশু-কিশোরকে নতুন পোশাক দিয়েছি। এর আগে বন্ধুদের সহযোগিতায় শহরের বিভিন্ন এলাকাঘুরে অসহায় শিশুদের খুঁজে, তাদের অভিভাবকদের কাছে নতুন পোশাক কেনার ‘টোকেন’ দিয়ে আসি।’
তিনি জানান, ‘শিশুদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা স্বরূপ পাঁচ টাকা করে পাওয়া মোট ৬২৫ টাকাও অসহায় এক ব্যক্তিকে চিনি, সেমাইসহ ঈদ উপকরণ কিনে দিয়েছি। ভবিষ্যতেও আমার এ ধরণের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে চাই। পড়ালেখার টাকা জমিয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছি। তরুণদের প্রতি আমার আহ্বান, আসুন সবাই মিলে অন্তত একটি ভালো কাজ করি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই।’
মির্জা গালিব সতেজের কয়েকজন বন্ধু বলেন, ‘২০১৭ সালের ফ্রেব্রুয়ারি থেকে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সতেজ। তার ইতিবাচক কাজে আমরা অনুপ্রাণিত। পড়ালেখার টাকা জমিয়ে এবং পারিবারিক সহযোগিতায় সতেজ মানবসেবা করে যাচ্ছে। সময়, শ্রম ও বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে আমরা তাকে সহযোগিতা করে থাকি।’
এআই/এমবি
আরও পড়ুন