বাউফলে নির্ধারিত দামের চেযে কমে বিক্রি হচ্ছে চামড়া
প্রকাশিত : ২০:৩৫, ১ আগস্ট ২০২০
মৌসুমী ব্যবসায়ী নেই। সাড়া নেই পাইকারদেরও। গত বছর পানির দরে বিক্রি হলেও এবার কোরবানির পশুর চামড়ায় পানির দরও নেই। বাধ্য হয়ে পটুয়াখালীর বাউফলের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াতিম খানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান কিংবা কেটে ভাগীদারদের মাঝে বন্টন করতে হচ্ছে পশুর চামড়া।
এ বছর কোবানির পশুর চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা, খাসির চামড়া ১৩-১৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১০ থেকে ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু, উপজেলার কোথাও দেখা মিলছে না চামড়ার মৌসুমি ক্রেতা কিংবা পাইকারের।
প্রতিবছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মূল্যের হেরফের করে চামড়া কিনলেও এবার যেন সম্পূর্ণই নিরব ভূমিকায় স্থানীয় মৌসুমী ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। তাই কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে সাধারণ বিক্রেতারা। খুচরা ও মৌসুমী ব্যবসাীয় না থাকায় কোরবানির পশুর চামড়া কেটে ভাগীদারদের মাঝে বন্টন করতে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকায়।
ধানদী গ্রামের শহিদুল ইসলাম (চুন্নু) হাওলাদার ভাগিদার নিয়ে কোরবানির গরু কিনেছেন ৮৩ হাজার টাকায়। আগে এমন সাইজের একটি গরুর চামড়া অন্তত ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৮শ’ টাকায় বিক্রি করতে পারলেও, এবার ক্রেতা না থাকায় ভাগিদার নিয়ে কেটে ভাগ করে নিয়েছেন তিনি।
তেমনি একই বাড়ির আজাহার হাওলাদার, আব্দুল মন্নান মাস্টারও বিক্রি করতে না পেরে একইভাবে খাওয়ার জন্য কাটাকুটি করে নিয়েছেন কোরবানির গরুর চামড়া। ধানদী গ্রামের আলাউদ্দিন মাস্টার, আ. সাত্তার মৃধা, বাচ্চু মাস্টার, জলিল জোমাদ্দার, আনিচুর রহমান মাস্টার, নাজমুল হাসান (রহুল আমিন) মাস্টার, দলিল উদ্দিন, আ. রাজ্জাক মেম্বর, নুরাইনপুর কলেজের অধ্যাপক মাওলানা আব্দুর রহিম, বড় ডালিমা গ্রামের মো. জাহাঙ্গির হোসেন, মমিনপুর গ্রামের আবুল কালাম আযাদ, ভরিপাশা গ্রামের শাহজাহান গাজী, নিমদী গ্রামের শামিম মাস্টার, কালাইয়া কমলা রাণীর দীঘি পাড়ের মিল্টন শরীফ, আকতার ফারুকসহ বিভিন্ন গ্রামের হাজারো জন কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারেননি ক্রেতা না থাকায়।
প্রতিবছর কোরবানির ঈদের এ সময় কালাইয়া বন্দরের ল্যাঙড়া মুন্সিরপুল এলাকায় চামড়া বোঝাই টমটম, ভ্যান, অটোগাড়ির ভিড় লেগে থাকলেও, সেখানে এবার জনশূন্য। চামড়া না কিনে হাত গুটিয়ে আছেন ধানদী গ্রামের মৌসুমী ব্যবসায়ি শানু ফরাজি, ফিরোজ খান, কালাইয়া লঞ্চঘাট এলাকার ধীরেন ঋষি, মানিক সিকদারসহ অনেকেই।
মেহেন্দিপুর গ্রামের প্রভাষক ফরিদুর রহমান জানান, ‘প্রতিবার পশু জবাই করে কাটকুটির সময়ই মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ছুটে আসত। এবার চামড়া নিয়ে অপেক্ষা করেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। চামড়া কেনায় উৎসাহ নেই নতুন ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। বাধ্য হয়ে তাদের কোরবানির চামড়া পাশের তাহফিজুল কুরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসায় দেওয়ার জন্য রেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘চামড়া নিয়ে কখনো বা ব্যবসায়ীদের বিপাকে পড়তে শুনতাম। এবার পশু কোরবানি করে সাধারণ বিক্রেতারা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অভিজ্ঞতা না থাকলে কেটে-কুটে ঘরে নিলেও চামড়া রান্না করে খাওয়া কষ্টসাধ্য। এ কারণে চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণের।’
হাত গুটিয়ে রাখা চামড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ধানদী এলাকার শানু ফরাজি জানান, ‘সরকার মূল্য নির্ধারণ করলেও ট্যানাররি মালিক কিংবা ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওই মূল্য পাওয়া যায় না। আগের বছর লোকসান গুনেছেন তিনি। এবার করোনায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে ভেবেই চামড়া কেনায় হাত গুটিয়ে রেখেছেন।’
দীর্ঘদিনের চামড়া ব্যবসায়ী পৌর সদরের আড়তদার রাধেশ্বামের ভাতিজা উত্তম ঋষি জানান, ‘দাম পাওয়া যায় না বলে কবরির চামড়া কিনছেন না তিনি। প্রতিটি ভাল মানের গরুর চামড়া দুইশ’ টাকা হিসেবে শ’পাঁচেক চামড়া কিনেছেন। তার বাড়িতে চামড়া আসা শুরু হয়েছে মাত্র। তবে এবার পশুড় চামড়া কিনছেন একই এলাকার লিটন, নিখিল ও মুকন্দ ঋষি।’
তিনি বলেন, ‘করোনায় পরিস্থিতি খুবই খারাপ। প্রচন্ড গরম পড়ছে। ধোঁয়া, মাংশ ছাড়ানো, লবণ দেওয়াসহ নানা ঝক্কি-ঝামেলা আছে চামড়া কেনায়। এরপর করোনা পরিস্থিতির এ সময় ঢাকায় ট্যানারী মালিক কিংবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওই দাম পাওয়া যাবে কী- না সন্দেহ আছে। কয়েক বছর ধরে চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়ছি। আমরা বেশি দামে চামড়া কিনব কোন ভরসায়?’
এআই//আরকে
আরও পড়ুন