ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘দেশে আসবে বলে ভাগ্নিদের জন্য চকলেট ও খেলনা কিনেছিলেন রনি’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৩:৪২, ৬ আগস্ট ২০২০

বৈরুতে বিস্ফোরণে নিহত মেহেদী হাসান রনি

বৈরুতে বিস্ফোরণে নিহত মেহেদী হাসান রনি

লেবাননের বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা গেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদী হাসান রনি-(২৫) নামে এক যুবক। তিনি জেলার সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে।

মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় লেবাননের বৈরুতে বিষ্ফোরনের ঘটনা ঘটে। যেখানে ৪ বাংলাদেশিসহ অন্তত ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। 

গতকাল বুধবার রনির মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে পৌঁছলে নিমিষেই শোকের ছাঁয়া নেমে আসে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বাবা তাজুল ইসলাম। মা ইনারা বেগম ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন রনি। গ্রামের একটি স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে অভাব-অনটনের কারণে আর পড়াশোনা করতে পারেননি।

বাহরাইন প্রবাসী বাবা তাজুল ইসলাম বাহরাইনে তেমন সুবিধা করতে না পারায় পরিবারের কথা ভেবে রনি বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ধার-দেনা ও সুদে টাকা এনে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ লেবাননে পাড়ি জমায় রনি। চলে যাওয়ার পর তার বাবা তাজুল ইসলামও বাহরাইন থেকে দেশে চলে আসেন। ফলে পরিবারের পুরো চাপ পড়ে রনির ওপর। 

লেবাবনের বৈরুতে একটি বিপনী বিতানে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করত রনি। মাসে ২০ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারতেন। টানা ছয় বছর পর গত মার্চ মাসে দেশে ফেরার কথা ছিল তার। সকল প্রস্ততিও নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সবকিছু উলট-পালট হয়ে যায়। কাজ বন্ধ থাকায় বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারছিলেন না। গত ঈদ-উল আযহায় মাত্র ১৬০০ টাকা পাঠিয়েছিলেন বাড়িতে।

রনির বাবা তাজুল ইসলাম জানান, ‘মঙ্গলবার দুপুরে সর্বশেষ রনির সাথে মুঠোফোনে তার কথা হয়। বাবার সাথে কথা বলে মায়ের সাথেও কথা বলেন রনি। রাতে রনির এক সহকর্মী ফোন করে জানায় রনি অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আবার ফোন করে জানান রনি মারা গেছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা এখন ছেলের লাশ দেশে আনার দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।’

রনির ছোট বোন জেসমিন আক্তার হ্যাপি বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর শুনেছি আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি নামাজ পড়ে দোয়া করেছি আর আল্লাহর কাছে ভাইয়ের প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি। শুনি আমার ভাই নাই।’

হ্যাপি বলেন, ‘প্রতিদিন কাজে যাওয়ার আগে ভিডিও কল দিয়ে আমার দুই মেয়ের সাথে কথা বলত ভাই। দেশে আসবে বলে দুই ভাগ্নির জন্য চকলেট ও খেলনা কিনে রেখেছিল। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটাও করেছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারছিল না। গত পহেলা বৈশাখে ভাইয়ের জন্মদিনে মা নিজ হাতে কেক বানিয়েছিল। ভিডিও কলে আমরা সেই কেক কেটেছিলাম। এখন আমার ভাইয়ের লাশটা চাই।’

এ ব্যাপারে মাছিহাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিনুল হক পাভেল বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই আমি রনির পরিবারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। লাশ দেশে আনার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করছি। লাশ আনার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এআই/এমবি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি