ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আজিজুর রহমান আর নেই

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ০৮:১৭, ১৮ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ১০:১৯, ১৮ আগস্ট ২০২০

করোনায় আক্রান্ত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গ করে আজীবন চিরকুমার ছিলেন তিনি। 

আজিজুর রহমানের চাচাত ভাই হাবিবুর রহমান রাজিব তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ৫ আগস্ট এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের শরীরে করোনা শনাক্ত হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিনই রাত ১২টায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এয়ার এ্যাম্বুলেন্স করে তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

জেলা পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান রিপন জানান, ‘ভোরেই ঢাকা থেকে তার মরদেহ নিয়ে মৌলভীবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স। প্রথমে তার লাশ বাড়িতে রাখা হবে। পরবর্তীতে গার্ড অব অনার, জানাজা ও দাফনের সময় জানানো হবে।’

উল্লেখ্য, আজিজুর রহমান জেলার গুজারাই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৪৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত আজিজুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশনায় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কারাবরণ করেন তিনি। এরপর একই বছরের ৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জেল ভেঙ্গে সিলেট কারাগার থেকে তাকে মুক্ত করা হয়। ২ মে পুনরায় পাকবাহিনী মৌলভীবাজার শহরে প্রবেশ করে বর্বরোচিত দমন পীড়ন চালানোর পর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। এক পর্যায়ে মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহুত পশ্চিমবঙ্গের বাগডুগায় (দার্জিলিং) প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগদান করেন। প্রবাসী সরকারকর্তৃক আয়োজিত সামরিক প্রশিক্ষণে সিলেট বিভাগের একমাত্র প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ৪ নম্বর সেক্টরের রাজনৈতিক কো-অর্ডিনেটর ও কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর শমসেরনগর, ৬ ডিসেম্বর রাজনগর এবং ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মৌলভীবাজারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন তিনি।

গণপরিষদের এই সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য রচিত সংবিধানের একজন স্বাক্ষরকারী। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনীতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মৌলভীবাজার জেলা শাখার দুই বারের সাধারণ সম্পাদক ও দুই বার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পরবর্তীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

চলতি বছরে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য আজিজুর রহমান।

এদিকে, তার মৃত্যুর খবর পেয়ে মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছাঁয়া। সকাল থেকে তার বাড়িতে ভিড় করছেন তার শুভানুধ্যায়ীরা।

এআই//এসএ
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি