এনায়েতপুরে ডা. নাজমুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ
প্রকাশিত : ১৮:১৮, ২১ আগস্ট ২০২০
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের মন্ডলপাড়ায় অবস্থিত জনতা ক্লিনিক এণ্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার-২ এর চিকিৎসক মেডিকেল সহকারী ডা. নাজমুলের একের পর এক ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় এলাকাজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।
সবশেষ ক্লিনিকের যুবতী এক আয়াকে জোর করে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা চাঞ্চল্যে নতুন মাত্রা বাড়িয়েছে। অতীতের ন্যায় এ ঘটনাটিও ধামাচাপা দিতে একটি চক্র ডা. নাজমুলের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কোন ব্যবস্থা না নিতে নির্যাতীতাকে কৌশলে চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনতা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, ডা. নাজমুল হাসপাতালের নারী কর্মচারী ও চিকিৎসা নিতে আসা মহিলাদের ধর্ষণ ও শ্লীলতহানীর ঘটনায় আমাদের হাসপাতালের সুনাম চরমভাবে খর্ব করায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ওই চিকিৎসকের এসব নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবার কথা জানিয়েছে সিভিল সার্জন।
জানা যায়, ২০০৩ সালে এনায়েতপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয় জনতা ক্লিনিক এণ্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। এরপর স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় সুনাম অর্জন করলে পরিধি বাড়াতে ২০১৮ সালে মন্ডলপাড়ায় জনতা ক্লিনিক এণ্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার-২ করে তাড়াশ উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মেডিকেল সহকারী ডা. নাজমুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানের মালিক শামীম আহমেদ অন্যান্য ব্যবসায়ীক কাজে নিয়োজিত থাকায় হাসপাতালের তদারকির দায়িত্ব দেন মালিকানায় শেয়ারে থাকা শিক্ষক বিনদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল্লাহ লিটনকে। পূর্ব থেকেই নারী লোভী ১ সন্তানের জনক লম্পট ডা. নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তার কাছে চিকিৎসা নিতে যাওয়া নারীরা হন নানাভাবে যৌন হয়রানীর শিকার। এছাড়া বেসরকারি এ হাসপাতালের নারী কর্মচারী থেকে আয়ারাও কু-নজরে পড়েছেন। লালসার অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় টাকা দিয়ে আর হাত পা ধরে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন ডা.নাজমুল। তারপরও তার এসব কু-কৃত্তি বন্ধ হয়নি।
গত আড়াই বছর আগে জনতা ক্লিনিকে কর্মরত বাক্ষ্মণগ্রামের এক আয়াকে ডা. নাজমুল ধর্ষণের চেষ্টা করে। এরপর মেয়েটি পরিবারের সদস্যদের জানালে সালিশী বৈঠকে হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়ে পার পায়।
একইভাবে গত বছর খানেক আগে খোকশাবাড়ি গ্রামের প্রবাসীর এক স্ত্রী চিকিৎসা নিতে আসলে তার উপর কু-নজর দেয় এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় ডা. নাজমুল। বিষয়টি তার অভিভাবকেরা জানতে পারলে স্থানীয় মাতব্বরদের সহযোগীতায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিষয়টি ম্যানেজ করা হয়।
এ রকম আরও অনেক ঘটনা রয়েছে ডা. নাজমুলের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ১৮ আগস্ট রাতে জনতা ক্লিনিক-২ তে অবস্থানকালে এক আয়াকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন তিনি। বিষয়টি নির্যাতনের শিকার মেয়েটি কয়েকজনকে জানালে ধামাচাপা দেয়ার জন্য উঠে পড়ে নারী লোভী নাজমুল।
অভিযোগ উঠেছে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় একটি চক্রের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নির্যাতিত মেয়েকে নিয়ে সমঝোতা হয়েছে।
ডা. নাজমুলের বিষয়ে হাসপাতালের মুল চিকিৎসক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জানান, ‘একের পর এক ঘটনায় আমাদের হাসপাতালটি পতিতালয় বানিয়েছে ডা. নাজমুল। এলাকার এক শ্রেণীর মাতব্বরকে টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে সে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। জনতা ক্লিনিক-২ এর আয়া নিজে আমার কাছে অভিযোগ করে বলেছে, ‘মাঝে মাঝেই আমাকে কু-প্রস্তাব দিয়েছে নাজমুল ডাক্তার। কয়েক দিন আগে সে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছে।’ আসলে তার জন্য হাসপাতালের মানহানী হচ্ছে। তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, ‘সাধারণ ঘটনা নিয়ে আয়া প্রিয়াংকার সাথে মনমালিন্য হওয়ায় তা মীমাংসা করে নেয়া হয়েছে।’
ডা. নাজমুলের এসব অপকর্মের বিষয়ে জনতা চাইলে ক্লিনিকের এমডি শামীম আহমেদ জানান, ‘হাসপাতালের দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট করেছে লম্পট ডা. নাজমুল ইসলাম। সর্বশেষ জনতা-২ ক্লিনিকের এক আয়াকেও ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আইনগত ব্যবস্থা নেবার পাশাপাশি হাসপাতাল থেকেও তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।’
ঘটনাটি নিয়ে এনায়েতপুর থানার ওসি মোল্লা মাসুদ পারভেজ জানান, ‘নির্যাতিতার অভিযোগ পেলে লম্পট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘চিকিৎসকের হাতে নারীরা অনিরাপদ। বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। দায়ী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এআই//আরকে//
আরও পড়ুন