কাজিপুরে বইছে নির্বাচনী আমেজ
প্রকাশিত : ২৩:৩৩, ২৩ আগস্ট ২০২০
সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন) শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সন্তান আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর কারনে আসনটি শুন্য। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন উপ-নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এই আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্যে গত ১৭ আগস্ট থেকে ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি ও জমা নেবার কাজ শুরু করেছে। গত ১৯ আগস্ট নাসিমপুত্র ও কাজিপুরের সাবেক এমপি তানভীর শাকিল জয় দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। আবার ২০ আগস্ট এই আসনে মোহাম্মদ নাসিমের বড় ভাই ড. মোহাম্মদ সেলিমের পুত্র ব্যারিস্টার রিপন দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন। এর ফলে কাজিপুরের রাজনীতি মাঠ এখন বেশ সরব।
তবে শুরুর দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের বেশ কয়েকজন প্রার্থিতার সুর তুললেও এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কাউকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নাম ঘোষণা করতে দেখা যায়নি। এ কারণে বাবার আসনে সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের নামই আসছে ঘুরেফিরে। কয়েকদিন ধরে যুক্ত হচ্ছে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর পরিবারের আরেক সদস্যের নাম। চাচা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান শেহেরিন সেলিম রিপনও। রিপন ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর নাতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে।
অন্যদিকে কাজিপুরে বিএনপির অস্তিত্ব সংকট এখনো কাটেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানোর কোন কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ২১ সদস্যের এডহক কমিটি গঠন করেছে তারা। দলটির নেই হালনাগাদ কোন ইউনিয়ন কমিটি। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে, প্রাকৃতিক দুযোর্গে, দুই ঈদে কর্মিরা নেতাদের কাছে পায়না।
ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহেরিন সেলিম রিপন বলেন, আমি মনোনয়ন চাচ্ছি, কারণ কাজিপুরের মানুষ ওখানকার নেতৃত্বের পরিবর্তন চায়। এলাকার মানুষ চাচ্ছে আমি যেন এখানে এসে তাদের পাশে দাঁড়াই। আমার বাবাও এমপি ছিলেন। বাবার পথ ধরে আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তবে আমি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবো। অন্যদিকে আমার চাচাতো ভাই জয়ও একই আসনে মনোনয়ন চাচ্ছেন। চাইতে পারেন। তবে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আমার আস্থা ও শ্রদ্ধা আছে, থাকবে।
নাসিমপুত্র সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, সিরাজগঞ্জ-১ আসন শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর পুণ্যভূমি। সেখানে তিনি এমপি ছিলেন। তার সন্তান এবং আমার বাবা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। একই আসনে আমিও এমপি নির্বাচিত হয়েছি। বাবা আমৃত্যু কাজিপুর তথা সিরাজগঞ্জবাসীর পাশে থেকেছেন। করোনা ভাইরাস মহামারীতেও তিনি মানুষের পাশে ছুটে গেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়েই তিনি মারা গেছেন। সেই আসনে উপনির্বাচনে আমি একজন প্রার্থী। দল যদি যোগ্য মনে করে এবং নির্বাচিত হই, তবে দাদা ও বাবার মতোই মানুষের জন্য কাজ করে যাব।
কাজিপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা টিএম তহজিবুল এনাম তুষার জানান, আমরা কমিটি গঠন ও দলকে চাঙ্গা করতে কাজ শুরু করেছি।’ উপ-নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন,‘ দলীয় সিদ্ধান্ত হলে আমরা মাঠে নামবো। ২৩ আগস্ট আমাদের এ সংক্রান্ত মিটিং রয়েছে।’
কাজিপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক রহমতুল্লাহ আইয়ুব জানান, ‘ইতোমধ্যে এই আসনে প্রাথর্ী হবার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা, যুগ্ন আহবায়ক টিএম তহযিবুল এনাম তুষার, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান রানা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বিএনপি নেতা এস এম শামীর আকতার তামিম। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাথর্ী শিল্পী কনকচাপা সম্পর্কে যুগ্ন আহবায়ক তহযিবুল এনাম তুষার জানান, ‘ উনি (কনকচাপা) বিগত নির্বাচনের পর থেকে আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেননি। এমনকি উনার নম্বরটিও বন্ধ। উনার সম্পর্কে দলের কেন্দ্রিয় নেতারা ভালো বলতে পারবেন।’ এদিকে শিল্পী কনকচাপার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশ জাসদের ঢাকা উত্তরের সভাপতি আলমগীর হোসেন এই নির্বাচনে প্রাথর্ী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।কাজিপুরে জাতীয় পার্টির কোন কমিটি বা দলীয় কার্যক্রম নেই। তাদের কোন নেতাকর্মিকে বক্তব্য নেবার জন্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
১৩ জুন মারা যান আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। শূন্য হওয়া আসনে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে সেই বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণও এখনো ঘোষণা হয়নি। তবে গত সোমবার থেকে সিরাজগঞ্জ-১ আসনসহ অন্য পাঁচটি আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে আগামীকাল ২৩ আগস্ট পর্যন্ত।
আসন্ন উপ নির্বাচন উপলক্ষে এখনও খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজিপুরে মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৬৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ২০১জন, মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৯৬৫ জন। পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটার সংখ্যা বেশি মোট ১ হাজার ৭৬৪ জন।
আরকে//
আরও পড়ুন