ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বাউফলে আমন চাষে ক্ষতির আশঙ্কা কৃষকের

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০০:০১, ২৪ আগস্ট ২০২০

পটুয়াখালীর বাউফলে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ জমিতে আমন রোপন শুরু হয়নি। অতি বর্ষণের কারণে সৃষ্ট জলবদ্ধতায় কৃষকরা জমি চাষ করতে পারছেন আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এই আবহাওয়া না কমলে বেশির ভাগ জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে যাবে।

এবছর আমন উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। লঘুচাপের প্রভাবে ৫-৬ দিনের টানা বৃষ্টিপাত আর তেঁতুলিয়া-লোহালিয়া নদীর জোয়ারের পানির চাপ  রোববার (২৩ আগস্ট) কমলেও বীজতলা তলিয়ে থাকায় আমন চাষে সর্বাধিক ক্ষতির আশঙ্কা কৃষকের।

জানা গেছে, অতি জোয়ারের পানি আর ভারিবর্ষণে উপজেলার চর ও নিন্মাঞ্চলে ২০ হাজার হেক্টর আমনের বীজতলাসহ কয়েক শ’ পুকুর ও সমন্বিত মাছের ঘের ভেসে যায়। ১৮ চর ও নিন্মাঞ্চলের অর্ধ-শতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হওয়ার পরে সূর্য উকি দিয়ে জোয়ারের চাপ কিছুটা কমলেও আমনের এই ভর মৌসুমে বীজতলা তলিয়ে থাকায় চাষে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক।

ধানদী গ্রামের কৃষক জালাল মাতবর, চন্দ্রদ্বীপের আব্দুল আলীসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, এর আগে সরকারি ভর্তূকি মিলিয়ে বিএডিসির নির্ধারিত ডিলারের বিভিন্ন খরচের কারসাজিতে ২৯০ টাকার ১০ কেজির প্রতি প্যাকেটের আমনের বীজ ৪শ’থেকে ৫শ’টাকায় কিনতে হয়েছে কৃষকের। শেষের দিকে এসে ৭শ’থেকে ৮শ' টাকাতেও বীজ ধান না পাওয়ায় অনেকেই নিজস্ব পদ্ধতিতে রাখা বীজে ধান বুনেন বীজতলায়। জৈষ্ঠের শেষ ও আষাঢ়ের শুরুর দিকে টানা বর্ষণ আর শামুকের কারণে নষ্ট হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ফের বীজতলা তৈরির করতে হয় অনেকের। এবার জোয়ারের পানি আর ভারি বর্ষণে মাঠ ঘাট আর বীজতলা ভেসে যাওয়ায় অনেকটা নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়বে নিন্মাঞ্চলের এসব কৃষক।

নদী পাড়ের বেড়িবাঁধের বাহির থেকে পানি নেমে গেলেও অধিকাংশ এলাকায় আমনের বীজতলা তলিয়ে আছে ৩-৪ ফুট পানির নীচে। সামনে আছে পূর্ণিমার জোয়ার। এখন থেকেই নতুন বাতাস বইতে শুরু করেছে। উত্তরাঞ্চলের বানের পানি আর জোয়ারের পানির চাপে সাগরে পর্যাপ্ত পানি নামতে পাড়ছে না। এছাড়া অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট তৈরি,নদী-খাল ভরাটসহ কালবার্ড, খাল,স্লুইজগেট বন্ধ থাকায় অধিকাংশ এলাকা পড়েছে জলাবন্ধতার কবলে। পানি নামতে পাড়ছে না নদীতে। পানিতে পুকুর-ঘের তলিয়ে মৎস্য সেক্টরেও বিপুল ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান এরা।

উপজেলার মুলভূখন্ড বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপের নিমদীর চরের কৃষক আ. ছালাম মৃধা বলেন,‘আমন মৌসুমে দফায় দফায় এই রোহম বিপর্যয় আগে দেহি নাই। এবার তারাতাড়ি কইরগ্যা দইরগায় পানি না নামলে আমনের বীচলাখলা (বীজতলা) বিনষ্ট অইবে। বীজ তুলতেও কস্ট অইবে খলা থেকে।’

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.জসীম উদ্দিন জানান,‘কয়েক শ’পুকুর ও ঘের ভেসে গিয়ে কোটি টাকার ক্ষতি হবে। ক্ষতির সঠিক পরিমান নির্ধারণের কাজ চলছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন,‘লক্ষ্যমাত্রায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টরের মধ্যে ১৯ হাজার ৫শ’হেক্টর স্থানীয় জাতের এবং ১৬ হাজার ৫শ’হেক্টর উচ্চ ফলনশীল জাতের আমনের বীজতলা রয়েছে। এর মধ্যে ২২ হেক্টর স্থানীয় এবং ১১শ’হেক্টরে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজতলা। মাঠ পর্যায়ে ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে দ্রুত পানি নেমে গেলে কৃষকের ক্ষতির পরিমান কমবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন,‘চন্দ্রদ্বীপের ৪শ’ পানিবন্দি মানুষের মাঝে ২০ কেজি করে চাল ও ৮শ’ জনকে খিচুড়ি ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। দুর্দশাগ্রস্থদের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা দেয়া হবে।’ 
কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি