চাঞ্চল্যকর জিসামনি ধর্ষণ-হত্যা ও জীবিত উদ্ধার, যা বলল পুলিশ
প্রকাশিত : ২০:১৫, ২৫ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ২০:১৮, ২৫ আগস্ট ২০২০
আদালতে উদ্ধারকৃত সেই জিসামনি
নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের চাঞ্চল্যকর কিশোরী জিসামনি ধর্ষণ ও হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া, তিন আসামির আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী এবং ৫১ দিন পর নিখোঁজ জিসামনি উদ্ধারের ঘটনা জেলাজুড়ে টক অব দ্যা টাউন পরিণত হয়েছে। পুলিশের তদন্ত ও আদালতে তিন আসামির দেয়া জবানবন্দি দেয়া নিয়ে দিনভর ছিলো আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।
তবে পুলিশ সুপার বলছেন, জিসামনির অন্তর্ধান, ফিরে আসা এবং তিন আসামির দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদানসহ প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতি দ্রুতই এই রহস্য উন্মোচন করবে পুলিশ। আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া তিন আসামির পরিবারের কাছ থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের ঘটনায় আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো: এ টি এম মোশারফ হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো: জায়েদুল আলম। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, মামালার আসামি পক্ষের আইনজীবী রোকন উদ্দিন অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে জিসামনি উদ্ধারের পরও আদালতে এফআরটি প্রদান না করে উল্টো তিন আসামির ১৬৪ ধারায় আদালতে দেয়া জবানবন্দী প্রদানের সূত্র ধরে অন্য মামলায় আসামিদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ আদালতে এফআরটি প্রদান না করলে আমরা ন্যায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
তবে রাষ্টপক্ষের আইনজীবি এ্যাভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকনের দাবি, মামলা প্রত্যাহারের কোন সুযোগ নেই। ভিকটিম উদ্ধার হয়েছে। বাদী যে মামলা করেছে এবং নতুন যে মামলা হবে এই দুটি মামলার তদন্ত একসঙ্গে চলবে। তদন্ত শেষ হলেই প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগস্থ পাক্কা রোড বসিন্দা পনের বছর বয়সের কিশোরী জিসা মনি গত ৪ জুলাই বিকেলে তাদের বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। দীর্ঘদিন খোঁজাখুঁজি করে মেয়ের সন্ধান না পেয়ে এক মাস পর ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। এ ঘটনায় জিসা মনির মায়ের মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে গত ৭ ও ৮ আগস্ট পুলিশ একই এলাকার রকিব, আবদুল্লাহ ও খলিল নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে। যাদের মধ্যে খলিল নৌকার মাঝি।
গ্রেফতারের পর এই তিন আসামি দুই দফা রিমান্ড শেষে কিশোরী জিসামনিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করে গত ৯ আগস্ট আদালতে জবানবন্দী দেয় বলে পুলিশ গণমাধ্যমকে জানায়। বর্তমানে আসামিরা জেল হাজতে রয়েছেন। তবে ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর গত রোববার (২৩ আগস্ট) মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকা থেকে ওই কিশোরীকে জীবিত ফিরে পাওয়ার পর তার বাবা-মা বিষয়টি রাতে সদর থানায় গিয়ে জানান।
এদিকে, জিসামনি ধর্ষণ, হত্যা এবং জীবিত ফিরে আসার বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে জেলাজুড়ে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন আসামি কেন জবানবন্দী দিলো- তা উদঘাটরে জন্য।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মো: জায়েদুল আলম বলেন, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াতে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ মামলা তদন্তে গাফিলতির যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা তদন্ত করতে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করিছ, অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করতে পারবো। একইসঙ্গে যে তিন আসামি জেল হাজতে রয়েছে তারাও যেন ন্যায়বিচার পায় সেটি লক্ষ্য রাখছি।
এদিকে, জিসামনি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুনকে বদলি করে ইন্সপেক্টর আব্দুল হাইকে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।
অপরদিকে, জিসামনি ৫১ দিন কোথায় ছিলো, কার সঙ্গে ছিলো, কে তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গেছে- এসব বিষয়ে ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেছেন জিসামনি নিজেই। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বিচারক আফতাবুজ্জামান জিসামনির জবানবন্দী রেকর্ড করে তার বাবার জিন্মায় মেয়েকে প্রদান করেছেন।
একইসঙ্গে জিসামনির কথিত প্রেমিক ইকবাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাচঁ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে তাকে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত আগামী ২৭ আগস্ট রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য করেন।
এনএস/
আরও পড়ুন