ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

মেয়রের নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত পেতে মা-মেয়ের অনশন

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:০১, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভায় চাকুরি পেতে প্রদানকৃত ১৫ লাখ টাকা ফেরতের দাবিতে আবারও অমরণ অনশনে বসেছেন শহরের শিশির পাড়ার সেই  মা ও মেয়ে। 

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে গাংনী উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনার চত্বরে অনশনে বসেছেন তারা।

গাংনী পৌর এলকার শিশিরপাড়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন ওরফে বাহাদুরের মেয়ে জনৈক মোমিনের স্ত্রী মৌমিতা খাতুন পলি জানান, ‘গাংনী পৌরসভায় সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগের জন্য পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলামের সাথে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। জামিজমা বন্দক রেখে, ধারদেনাসহ বিভিন্ন এনজিওর কাছে চড়া সুদে টাকা নিয়ে মেয়রকে দেওয়া হয়েছে। মেয়রের নির্দেশে গত ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক মেহেরপুর শাখায় মেয়রের স্ত্রী জেলা পরিষদ সদস্য সাহানা ইসলাম শান্তনার ৬৪৫৪ নম্বর (হিসাবে) একাউন্টে ৫ লাখ ৭০ হাজার, ২৫ জানুয়ারি ৫০ হাজার, ৫ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা দিয়ে ১৫ লক্ষ টাকার বাকি টাকা নগদ প্রদান করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘টাকা নিয়ে ২০১৮ সালের ১৯ মে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও আমাকে নিয়োগ না দিয়ে অন্য একজনকে সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগ দেন মেয়র আশরাফুল। আমাকে নিয়োগ না দেওয়ায় আমার প্রদেয় টাকা ফেরত চেয়ে বারবার তাগাদা দিলেও কোন কর্ণপাত না করে মারধর ও হুমকি দিয়ে পৌরসভা থেকে বের করে দেয়। তাই বাধ্য হয়ে বিচার চেয়ে গত ২০ আগষ্ট বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গাংনী শহীদ মিনারে টাকা ফিরে পাবার দাবিতে অনশন করি। পরে গাংনী থানার ওসি বিচারের আশ্বাস দিলে বাড়ি ফিরে যায়।’

বিষয়টি  নিয়ে গত ২১ আগস্ট রাতে গাংনী থানা চত্বরে পৌর মেয়র আশরাফুর ইসলামের উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের সালিশী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক, গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবাইদুর রহমান, গাংনী থানার সেকেন্ড অফিসার আহসান হাবিব, এসআই আব্দুল হান্নান, সাবেক এমপি মো. মকবুল হোসেনের একান্ত সহকারী সাহিদুজ্জামান শিপু, পৌর কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, সাহিদুল ইসলাম, এনামুল হক, শ্রমিক নেতা মনিরুজ্জামান মনি, অভিযোগকারী মৌমিতা খাতুন পলি, তার মা-বাবাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। 

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পলির স্বামীকে নিয়ে বসে তাদের মধ্যে টাকা লেনদেনের বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে সকলে উদ্যোগী হবেন বলে আশ্বস্ত করা হয়।

তবে মেয়র আশরাফুল ইসলাম-পলির স্বামী মোমিনকে টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে দাবি করলেও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক ও গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবাইদুর রহমান মোমিনের সাথে কথা বলে জানান, ‘মোমিন কোন টাকা ফেরত নেননি বলে তাদের জানিয়েছেন। মেয়র আশরাফুল ইসলামকে টাকা ফেরত দেবার প্রমাণ দেখাতে বল্লে তিনি তা না দেখিয়ে গড়িমসি করছেন।’
  
সালিশ বৈঠকের পর আজ পর্যন্ত মেয়র বিষয়টি মীমাংসা না করে বলেন, ‘মৌমিতা খাতুন পলির পিতা শিশিরপাড়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন ওরফে বাহুদুর আমার অত্যান্ত আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তার বাড়ির সামনে আমার ৪০ শতাংশ জমি আছে।  ওই জমির ৫ কাঠা বিক্রি করার জন্য দামাদামি করি। পরে ৫ কাঠা জমির মূল্য নির্ধারন করা হয় ১৫ লাখ টাকা। জমি বিক্রি করার জন্য পলির স্বামী মোমিন আমাকে টাকা দিয়েছিলেন। চাকরির জন্য নয়। যেহেতু পলির স্বামী মোমিন আমাকে টাকা দিয়েছিল তাকে ফেরত দিয়েছি। এ বিষয়ে এর বেশি তিনি আর কিছু বলতে চাননি।’

তবে কাউন্সিলর সাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়র চাকরির জন্য টাকা নিয়েছেন। যা পৌর পরিষদের অনেকেই জানেন। চাকরির নাম করে অসহায় মানুষের নিকট থেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চরম অন্যায় কাজ।’

মৌমিতা খাতুন পলির দাবি, ‘চাকরির দেওয়ার নামে ঘুষ নিয়ে সেই টাকা মেয়র ফেরত না দেওয়ায় প্রথম দফা অনশন, তারপর সালিশ বৈঠক হলো। এর পরেও কোন কুল কিনারা না পেয়ে আজ থেকে আবার অনশন শুরু করলাম। আমার গর্ভে সন্তান আছে। টাকা না দেওয়ায় এখন আমার স্বামী আমাকে নিতে চাচ্ছে না। একমাত্র মৃত্যুই এর সমাধান। আমি আর উঠছি না। আমি ও আমার অনাগত সন্তান মারা গেলে আমাদের লাশ বাড়ি যাবে।’
 
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবাইদুর রহমান জানান, ‘অনশনের বিষটি জেনেছি। আমরা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও মেয়র সাহেবের সাথে বসেছিলাম। বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তবে এসব বিষয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোন উপাই দেখছি না।’
এআই/এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি