ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

পথ যেন যাচ্ছে ওদের থেমে, করোনায় রুদ্ধ কৈশোর...!

বাউফল (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা 

প্রকাশিত : ১৭:২৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

ছুটে যাওয়ার কৈশোর। তবুও পথ যেন যাচ্ছে ওদের থেমে। কাধে পলিমারের বস্তা আর হাতে সাদা রঙের প্লাস্টিকের ভিক্ষার পাত্র। গ্রামের পর গ্রাম ছুট। ক্লান্তিতে কোথাও একটু থেমে আবাও ছুট। পদ্মার ভাঙনে সহায়-সম্বলহারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাজের সন্ধানে পটুয়াখালীর বাউফলে ছুটে এসেছে তারা। নিরুপায় হয়ে ভিক্ষার হাত বাড়ানো এই দুই কিশোর নসিম (১৫) আর মাজেদুল (১৪)।

ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে পায়ে হেটে গ্রামে গ্রামে ছুটে চলার ক্লান্তি লাঘবে নাজিরপুর এলাকার ডানিডা সড়ক পাশের গাছের ছায়ায় থামা কিশোর নসিম আর মাজেদুলের সঙ্গে বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। 

এ সময় উভয়ের পরনে ছিল লুঙ্গি, মাথায় টুপি। একজনের হাতে ইলেকট্রনিক্স ঘড়ি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে মায়াবি বিরহ বিরহ চেহারার নসিম আর বেগুনী চেক জামা গায়ে এক অবিকল অজানা পথ হাটার ক্লান্তি মাখা রক্তজবা চোখের দূরন্ত কিশোর মাজেদুল স্মৃতিভেজা মলিন স্বরে জানায়, পদ্মা নদীর কুলে শরিয়তপুরের নুরিয়া উপজেলার পায়রা গ্রামে বাড়ি ছিল ওদের। নসিমের বাবার নাম কিতাবুল ইসলাম, মায়ের নাম নাছিমা। পাঁচ ভাই-বোন ওরা। বিয়ের পর বড় বোন স্মৃতি চলে যায় স্বামীর ঘরে। বিয়ে করে ভাই নাসিমও উঠে শশুড় বাড়ি।
 
নসীবা আর ইয়াছিন নামে অপর দুই ভাইবোনসহ মা-বাবার সঙ্গে কাজের সন্ধানে ছুটে এসে উপজেলার বগা হাই স্কুলের একটি পরিত্যাক্ত কক্ষে ঠাঁই হয়েছে ওদের। কাজের সন্ধ্যানে একইসঙ্গে ছুটে আসা প্রতিবেশী মাজেদুলের বাবার নাম ইয়ার উদ্দিন, মায়ের নাম পুষ্প বেগম। চার ভাই-বোন ওরা। মাজেদুলই সবার বড়। অপর ভাই-বোনদের নাম মাজিউন, শ্রাবণ ও সামিউন।
 
নসীমের বাবা কিতাবুল নিজ এলাকায় গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাঁঠ কাটা আর জেলে পেশায় জড়িত ছিল মাজেদুলের বাবা ইয়ার উদ্দিন। যথেষ্ট আগ্রহ থাকলেও পদ্মার ভাঙনে জায়গা-জমি হারিয়ে অসহায় পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে এর আগে একটি হোটেলে কাজ করতো নিজ এলাকায় নসীম। মাজেদুল ছিল জেলে শ্রমিক। ভালো কোন কাজ নয় কাপা কাপা স্বরে স্বীকার করে এবং নিরুপায় হয়ে দু’মুঠো খাবার জোগাতেই বাড়ি বাড়ি ভিক্ষার হাত বাড়িয়েছেন জানায় ওরা।

নসিম ও মাজেদুল আরও জানায়, পদ্মার ভাঙনে এলাকায় নিজেদের জায়গা জমি বলতে কিছুই আর নেই। আগে কখনো ভিক্ষার কাজও করেননি ওরা। এখানে কেউ চিনবে না ওদের। ভিক্ষা চাইতে গেলে টুপি মাথায় থাকলে ভাল হয়। মানুষ ভদ্র ভাবে। একান্ত নিরুপায় হয়েই এ কাজ করছে ওরা। 

আজকের দিনের খাবারও ওদের নেই। সপ্তাহ খানেক আগে এলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে কেউ কোন কাজেই লাগাতে চাচ্ছে না দু’জনার বাবা কিংবা ওদেরকে। সাধ্যমতো কাজ পেলে আগ্রহী বলেও জানায় ওরা।

নসিম মাজেদুলের সঙ্গে আলাপ চারিতার একপর্যায়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে থাকা আনিচুর রহমান নামে একজন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক দশ টাকার দুটি নোট দেয় ওদের দু’জনকে। হাত বাড়িয়ে নিতে নিতে নসীম তখন ব্যাপক বিরহে অনেকটা মুখ আড়াল করে বলে ওঠে ‘কামে ছুটতে চাই. করোনায় পথ নাই’। 

এআই//আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি