ইউএনও ওয়াহিদার উপর হামলায় নওগাঁয় ক্ষোভের আগুন
প্রকাশিত : ১৮:১৮, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
ওয়াহিদা খানমের উপর নৃশংস হামলার ঘটনায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে মহাদেবপুরবাসী। ছবি: একুশে টেলিভিশন
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের উপর নৃশংস হামলার ঘটনায় তার জন্মস্থান নওগাঁর মহাদেবপুরে বিরাজ করছে ক্ষোভের আগুন। সকলের প্রিয় ওয়াহিদার এই অবস্থায় স্বজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশীদের মাঝে বইছে কান্নার রোল। কেউই মেনে নিতে পারছেন না এই ঘটনা। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে এই নৃশংস হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মহাদেবপুরবাসীর পক্ষ থেকে সদর উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে।
ইউএনও ওয়াহিদা খানমের গ্রামের বাড়ি মহাদেবপুর উপজেলা সদরের দক্ষিণপাড়া গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে প্রতিবেশী ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে প্রতিবেশী মোশারফ হোসেন জানান, ওয়াহিদা আমাদের এলাকার গর্ব। গ্রামের কৃতি সন্তান ওয়াহিদা খানমের শৈশব-কৈশোর কেটেছে এই গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই এখানে খেলাধূলা করে বড় হয়েছে এবং মানুষের সেবায় নিজেকে যোগ্য হিসাবে গড়ে তুলেছেন। লেখাপড়ায় সে অত্যন্ত মেধাবি ছিলেন। সৎ আর পরোপকারিতার কারণে সবার কাছে প্রিয় মানুষ হিসেবেই পরিচিত। এমন পরিণতির পেছনে যারা দোষী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
তিনি আরও জানান, চার ভাইবোনের মধ্যে ওয়াহিদা তৃতীয়। গত ২৯ আগস্ট তিনি সর্বশেষ গ্রামে এসেছিলেন। ৩১ আগস্ট তিনি কর্মস্থলে ফিরে যান। তিনি যেখানেই থাকুন না কেন গ্রামের সাথে ছিল তার আত্মার সর্ম্পক।
এদিকে ৩১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হওযার আগে ওয়াহিদা খানম মহাদেবপুর উপজেলার দোহালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ওই স্কুলের সহকর্মী ও সহপাঠিরাও এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ওই স্কুলের শিক্ষক আল মামুন, রায়হান আলম ও রুবেল হোসেন বলেন, সহকর্মী হিসেবে ওয়াহিদা ছিলেন চমৎকার মনের মানুষ। তিনি কর্মরত অবস্থায় এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল উৎসব মুখর। দুর্বৃত্তরা তার উপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে যা মেনে নেয়ার মত নয়। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলুক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
গ্রামবাসীরা জানান, ওয়াহিদা খানমের চার ভাইবোনের মধ্যে বড়বোন নাটোরে রূপালী ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মেঝভাই বগুড়ার কাহালু থানার ওসি (তদন্ত) ও ছোটভাইও পুলিশে কর্মরত আছেন।
এদিক ওযাহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের বিচার দাবি করে মহাদেবপুরবাসীর পক্ষ থেকে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু আহম্মেদ, বাসস্টান্ড বণিক সমিতির সভাপতি মুনিরুল হক মুনি, ওয়াহিদা খানমের সহপাটি ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী গোলাম সরোয়ার মেহেদী, রাবেয়া পল্লীর পরিচালক ওবাইদুল হক বাচ্চু ও গোলাম কিবরিয়া নাইস প্রমুখ।
বক্তারা ওয়াহিদার উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে বলেন, অন্যায়ের সাথে আপোস না করায় ইউএনও ওয়াহিদাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই দ্রুত সমযের মধ্যে এই ন্যাক্কারজনক হামলাকারীদের বিচার সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।
উল্লেখ্য, বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে একদল দুর্বৃত্ত ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা তাকেও কুপিয়ে জখম করে। গুরুতর আহতবস্থায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে রংপুর ডক্টরস ক্লিনিকের আইসিইউতে ও তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওয়াহিদা খানমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওই দিন দুপুরে রংপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।
এএইচ/
আরও পড়ুন