লালপুরে কাবিখা প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশিত : ১৬:৫১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
নাটোরের লালপুর উপজেলায় কাবিখার প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রকল্পের অধীন কাঁচারাস্তা সংস্কার ও মাটি ভরাট কাজ করার ২/৩ মাসেই আগের অবস্থায় ফিরে এসে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। উপজেলায় সদ্য শেষ হওয়া প্রায় ২২টি প্রকল্পের সবকটি প্রকল্প সভাপতির বিরুদ্ধে দায়সারা কাজ করে বরাদ্দের সমুদয় খাদ্য-শস্য আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার দুয়ারিয়া ও কদিমচিলান ইউনিয়নের ৩টি প্রকল্পে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরের কাবিখা প্রকল্পের আওতায় কদিমচিলান ইউনিয়নের ঘাটচিলান পাকারাস্তার মাথা হতে পানঘাটা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার কাঁচারাস্তা সংস্কারের জন্য ৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বারাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য আলাল সরদার গত ৪ মাস পূর্বে রাস্তাটি সংস্কারের কাজ করেছেন এবং কাজ শেষে তার বিলও উত্তলন করেন। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ৩ মাস না যেতেই বৃষ্টির পানি জমে কাদা-পানিতে রাস্তাটি আবারও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
দিপক নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান,‘কিছু দিন আগে রাস্তায় কাজ হয়েছে। কাজের সময় মাটি না ফেলে রাস্তায় ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিয়ে উচুঁ নিচু সমান করে দিয়ে কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন আগে যেমন ছিল, তেমন হয়ে গেছে।’
প্রকল্প সভাপতি আলাল সরদার অবশ্য অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ‘রাস্তার কাজ ভালভাবে করা হয়েছে। অতি বৃষ্টি এবং ট্রাক্টর চলাচলের কারণে এমনটি হতে পারে।’
কদমচিলান ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বলেন,‘এই প্রকল্পগুলি এমপির বরাদ্দ। কাজটি কে করেছে কিছুই জানি না।’
একই অবস্থা দুয়ারিয়া ইউনিয়নের নওদাপাড়া নুরভানুর বাড়ি থেকে মুঞ্জুর বাড়ি পর্যন্ত ও হাপানিয়া অজয়ের বাড়ি হতে লিটন মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত। এই দুটি প্রকল্পের জন্য সাড়ে ১৪ মেট্রিক টন খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে নওদাপাড়া নুরভানুর বাড়ি হতে মুঞ্জুর বাড়ি রাস্তার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬ দশমিক ৫ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য। ৩ মাস আগে রাস্তাটি সংস্কা কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এলাকায় গিয়ে দেখা যায় রাস্তাটি কাদা পানিতে একাকার।
এলাকার আলহাজ্ব নওয়াব আলী ও রেজাউল করিম জানান,‘কদিন আগে রাস্তায় কিছু লোক দেখেছি কাজ করতে। এখন এই রাস্তায় হেটে যাওয়ারই উপায় নেই। কাঁদা আর পানিতে পড়ে লুটোপুটি খেতে হয়। এখন আর রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায়না।’
এই প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে যে এস্টিমেট দিয়েছে সে অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। কোন অনিয়ম করা হয়নি।’
এদিকে অজয়ের বাড়ি হতে লিটন মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটি দেখে বুঝার উপাই নেই এইটা রাস্তা নাকি জমির আইল। এই রাস্তা সংস্কারের জন্য দেওয়া হয় ৮ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য।’
এলাকার বাসিন্দা শাকিল জানান, ‘কদিন আগে মহিলা শ্রমিক দিয়ে রাস্তার কিছু নিচু স্থানে মাটি কেটে দিতে দেখেছি। এখন তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য শারমিন আক্তার বলেন, ‘প্রকল্পটি এমপির দেয়া বরাদ্দ অনুযায়ী করা হয়। এছাড়া কাজটা এমপির স্থানীয় প্রতিনিধিরাই করেছেন। আমি শুধু প্রকল্পের সভাপতি ছিলাম।’
ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এইটা এমপির প্রকল্প, কে করেছে কাজ কেমন হয়েছে বলতে পারব না। আমার এলাকার কাজ হলেও আমি কিছুই জানিনা। মানুষ আমার কাছে অভিযোগ করে রাস্তা দিয়ে তারা যাতায়াত করতে পারছে না।’
লালপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের কাবিখা প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় মোট ২২টি কাঁচারাস্তা সংস্কারের জন্য ৮০ দশমিক ৫৮০ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহাফুজুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ প্রায় প্রতি মৌসুমেই পাওয়া যায়। অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। প্রকল্পের কাজ শেষ হতে না হতেই অতি ও প্রবল বর্ষনের কারণে কিছু কিছু রাস্তায় পানি জমে যায়। এসব গ্রামীণ রাস্তায় পাওয়ার ট্রিলার জাতীয় যানবাহন চলাচলের কারণে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে পথচারীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
এআই//এমবি
আরও পড়ুন