ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বেনাপোলে বেড়েছে মিঠা পানির মাছ রপ্তানি

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৬:১৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ভারতে মিঠা পানির সাদা মাছের চাহিদার কারণে বেনাপোল দিয়ে দিনের পর দিন মাছ রপ্তানি বেড়েই চলেছে। তবে দাম কম থাকায় ভারত থেকে রুই জাতীয় কিছু মাছ এখনও আসছে। মৎস্য বিভাগ ও মাছ চাষিরা বলছেন, দেশিয় মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এখন আর ভারত থেকে মাছ আমদানির প্রয়োজন নেই। তারপরও আমদানি হচ্ছে। এটি বন্ধ হলে আমাদের দেশের চাষিরা লাভবান হতেন।

গত তিন বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়েছে দুই কোটি ৯৯ লাখ ৮৯ হাজার ২০৫ মার্কিন ডলার মূল্যের এক কোটি ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮২ কেজি মাছ। একই সময় ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৯৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৭ ডলার মূল্যের এক কোটি ৩০ লাখ ৬৮ হাজার ৯১৮ কেজি মাছ।

বেনাপোলের ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতে মাছ রপ্তানি হয়েছে ৩২ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪ কেজি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩০ কেজি এবং গেল অর্থবছরে (২০১৯-২০) রপ্তানি হয়েছে ৫২ লাখ ৪৫ হাজার ৮ কেজি মাছ। একই সাথে ভারত থেকে এদেশে মাছ আমদানি হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩২৫ কেজি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৮ কেজি ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৮ লাখ ২৩ হাজার ৯১৫ কেজি।’

করোনার কারণে এপ্রিল ও জুন মাসে বাংলাদেশ থেকে কোনো মাছ রপ্তানি হয়নি। জুলাই মাসে রপ্তানি হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৩৯২ কেজি মাছ। যার মূল্য ৫ লাখ ১৮ হাজার ৪৮০ ডলার। জুন ও জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৭ কেজি। যার মূল্য ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৯ মার্কিন ডলার। গেল আগস্ট মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৬৬ কেজি মাছ। যার মূল্য ৭ লাখ ৭২ হাজার ৪১৫ মার্কিন ডলার। একই মাসে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৭৫ কেজি মাছ। যার মূল্য ১১ লাখ ৯১ হাজার ৯১৬ মার্কিন ডলার।

শার্শা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, ‘ভারত থেকে আমদানি হয় রুই, কাতলা, সামুদ্রিক ও স্বাদু পানির মাছ। আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় পাবদা, গুলশা, টেংরা, পাঙ্গাস, হিমায়িত চিংড়ি, কার্প, ভেটকিসহ অন্যান্য মাছ। এর মধ্যে পাবদা মাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় মোট রপ্তানির ৪০ শতাংশই পাবদা। পাবদা মাছ বেশি উৎপাদিত হয় যশোর জেলায়।’

তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে যেসব মাছ আমদানি হচ্ছে এগুলো এখন স্থানীয়ভাবেই ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। আমদানি করার প্রয়োজন নেই। আমদানি বন্ধ হলে আমাদের দেশের চাষিরা ব্যাপক লাভবান হতেন।’

যশোরের শার্শা উপজেলায় চাহিদার তিন গুণ বেশি মাছ উৎপাদন হচ্ছে জানিয়ে আবুল হাসান বলেন, ‘উপজেলার ১৫টি বাঁওড়, ২৭১টি ঘের, ১০টি বিল ও ছয় হাজার ৬১৯টি পুকুর মিলে মোট ছয় হাজার ২৩৯ হেক্টর জলাশয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এখানে বছরে ২২ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয় কিন্তু স্থানীয় চাহিদা মাত্র সাত হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত মাছ অন্যান্য এলাকায় ও ভারতে রপ্তানি করা হয়।’

যশোরের শার্শা উপজেলার ‘সততা ফিসের’ স্বত্ত্বাধিকারী ও মাছ রপ্তানিকারক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘ভারতে পাবদা ও কার্প জাতীয় মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা সাধারণত পাবদা ও টেংরাসহ অন্যান্য মিঠা পানির মাছ রপ্তানি করে থাকি।’ 

যশোরের শার্শায় ‘আফিল এ্যাকোয়া ফিসে’ প্রতিদিন ১০ মেট্রিক টন মাছ ও মাছের পোনা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৬০ দিনে ৮ লাখ পিস মাছ উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে শিং, মাগুর, পাপদা, রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমরা প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেনুপোনা সংগ্রহ করে থাকি। পরে ট্যাঙ্কের মাধ্যমে রেণু নার্সিং করে পুকুরে মজুদ করার পর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব মাছ আমরা দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে থাকি।’

এ ব্যাপারে যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, ‘দাম কম হওয়ার কারণে ভারত থেকে রুই-কাতলা মাছ আমদানি হচ্ছে। এসব মাছের থেকে আমাদের দেশের রুই মাছের স্বাদ অনেক ভালো। ভারত থেকে মাছ আমদানি প্রয়োজন হয়না। এটি বন্ধ হলে আমাদের দেশের চাষিরা লাভবান হতেন। এক সময় ভারতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ রপ্তানি হতো। ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে প্রিয় হলেও দেশের চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন সময় তা রপ্তানি বন্ধ রাখে বাংলাদেশ সরকার।’

২০১২ সালের আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হতো। তবে ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ২০১২ সালের পর ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় সরকার। ইলিশ রপ্তানি নিষিদ্ধ হলেও গতবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাঁচশ’ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয় সরকার। তার প্রথম চালান গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতে যায়। এরপর থেকে আবারও বন্ধ রয়েছে ইলিশ রপ্তানি।

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মূলত পাবদা, গুলশা, টেংরা ও পাঙ্গাস মাছ রপ্তানি  হয়ে থাকে। এর মধ্যে পাবদা মাছের চাহিদা বেশি। মোট রপ্তানির ৪০ শতাংশ যায় পাবদা। পাবদা মাছ বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে যশোর জেলায়। এছাড়া সাতক্ষীরা, খুলনা, ময়মনসিংহ, মাগুরা ও ফরিদপুর থেকে আসা মাছও রপ্তানি হচ্ছে। 

এআই/এমবি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি