সুনামগঞ্জে নাম সর্বস্ব নিউজ পোর্টালের ছড়াছড়ি
প্রকাশিত : ১৯:০৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৯:২৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জেও বাড়ছে অনলাইন পোর্টালের সংখ্যা। বেড়ে গেছে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের সংখ্যাও। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকতার স্থান। মানা হচ্ছে না অনলাইন নিউজ পোর্টাল তৈরীর নীতিমালা। ফলে অত্যাধিক হারে বেড়ে গেছে তথ্য সন্ত্রাস। যেখানে একটি পত্রিকা কিংবা টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন নিতে পোড়াতে হচ্ছে বহু কাঠখড়। সেখানে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল তৈরী করতে মাত্র ২ থেকে ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেই বনে যাচ্ছেন সম্পাদক, প্রকাশক কিংবা সাংবাদিক।
সাংবাদিকদের বলা হয় রাষ্ট্রের তৃতীয় স্তম্ভ এবং কেউ কেউ আয়না বলেও অবহিত করেন। সুনামগঞ্জেও এ ধরনের সম্পাদক, প্রকাশক কিংবা সাংবাদিকের ছড়াছড়ি। এ সময় নাম সর্বস্ব নিউজ পোর্টালের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ৮ম শ্রেণি-একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও বনে যাচ্ছেন সম্পাদক ও প্রকাশক। তাদের বেশীরভাগই ১৫-১৮ বছরের। টাকার বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রেসকার্ড। অনেকেই আবার নিজের স্বাক্ষরিত কার্ডে নিজেই সম্পাদক প্রকাশক, স্টাফ রিপোর্টার কিংবা জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি’র কার্ড ব্যবহার করছেন। যার ফলে জেলার সংবাদিকতায় বাড়ছে কপি পেস্টের ব্যবহার। এসব অপসাংবাদিকতা বন্ধ করতে জেলা প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, কিছু দিন পূর্বে যারা ছিল ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, কর্মহীন যুবক, ঠিকাদার কিংবা দালালের কাজে নিয়োজিত। তারাই আজ এসব অনলাইন নিউজ পোর্টালের বদৌলতে সাংবাদিকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা কিংবা উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই হুট করে বনে যাচ্ছেন জেলার বড় মাপের সাংবাদিক। তারা নিজেদেরকে পরিচয় দিচ্ছেন সম্পাদক, প্রকাশক কিংবা সাংবাদিক হিসেবে। যে কোন দপ্তরে গিয়েই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। এ সব অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করা সময়ের দাবী। আর এসব অনলাইন নিউজ পোর্টালের কারণে বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজীর ঘটনা। এদের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকরা হারাচ্ছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা। এসব পত্রিকার মালিকের মধ্যে অনেকেই আবার মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত রয়েছেন, তবুও তারা সম্পাদক। নিজের পোর্টাল থেকে লাইভের মাধ্যমে জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহার করে তাদের জনপ্রিয়তা হাসিল করে চলছেন। এতে করে জেলার মূলধারার সাংবাদিকতা হুমকীর মুখে পড়ছে বলে মনে করছেন সচেতনমহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন কোন ব্যক্তির নামে ২ থেকে ৫টি নিউজ পোর্টালও রয়েছে। আর এসব পোর্টালে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপদেষ্টা হিসেবে নাম ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সাংবাদিকতার ব্যবসা। দেখা যায়, হঠাৎ করে কোন ব্যক্তি বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মনগড়া ও তথ্যহীন রিপোর্ট তৈরী করে অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করে তাদের ইমেজ নষ্ট করা হচ্ছে। আবার উপর থেকে চাপ আসলে সাথে সাথে তা ডিলেট করে দিচ্ছেন। আবার বড় বড় নেতাদের লাইভে এনে কামাচ্ছেন বাহাবা।
সরকারের তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ গত কিছুদিন পূর্বে বলেছিলেন, “সরকার কর্তৃক নিবন্ধন ব্যতীত কোন নিউজ পোর্টালের গ্রহণযোগ্যতা নাই এবং তারা কোন সাংবাদিক নয়। এদের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে।” অথচ একটি পত্রিকার অনুমোদন নিতে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা বারবার যাচাই-বাছাই করণের মাধ্যমে অনুমোদন দিয়ে থাকেন। আর এসব পত্রিকা কিংবা গণমাধ্যমের মালিকরা সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। ফলে ইচ্ছে করলেই যে কোন বিষয়ে সংবাদ প্রচার করতে পারেন না।
এ ব্যাপারে জেলার প্রিন্ট পত্রিকা সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা জানান, “যেভাবে অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংখ্যা বাড়ছে সেভাবে বাড়তে থাকলে প্রকৃত সাংবাদিক ও সম্পাদকরা ছিটকে পড়তে হবে। বন্ধ করে দিতে হবে পত্রিকা। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।”
এ ব্যাপারে তথ্য অদিফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরত কুমার সরকার বলেন, সরকার এসব অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং তথ্য অধিদফতর কিছু অনলাইন পোর্টালকে আবেদনের প্রেক্ষিতে নিবন্ধন প্রদান করছে। যাদের নিবন্ধন পাওয়ার বাকি রয়েছে আগামী মাসের মধ্যে তাদেরকে নিবন্ধন দেয়া সম্পন্ন হবে।
এসময় তিনি আরো জানান, যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে আবেদনকৃত অনলাইন পোর্টালের মধ্যে যেসব অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে নিবন্ধন দেয়া হবে না তাদের বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এনএস/
আরও পড়ুন