পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়ল দ্বিগুণ
প্রকাশিত : ১৭:৪২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৭:৪৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
ভারতীয় কৃষিপণ্য মূল্য নির্ধারণকারী সংস্থা ‘ন্যাপেড’ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে হঠাৎ করে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে ৭৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করায় তার প্রভাব পড়েছে বেনাপোল বন্দরে। আগে প্রতি মেট্রিক টন ৩৫০ মার্কিন ডলারে রপ্তানি করলেও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সোমবার থেকে তা ৭৫০ মার্কিন ডলারে আমদানি করতে হবে বলে জানায়।
যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয় তাহলে আগের এলসিগুলো পুনঃরায় মূল্য বাড়িয়ে (এ্যামানমেন্ড করে) পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকায় বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে পেট্রাপোল বন্দরে আটকে আছে দেড় শতাধিক পেঁয়াজের ট্রাক ও ৪২টি ওয়াগানযুক্ত তিনটি পেঁয়াজের ট্রেন।
সোমবার সকালের দিকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রবেশের পরপরই দেশের সবগুলো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকদের সংগঠন। ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজ সঙ্কট থাকায় বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করতেই আমদানি মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে দাবি করছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
তবে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- পেঁয়াজ মৌসুমে প্রতিবারেই ভারত এমন কাজ করে থাকে। শুধু পেঁয়াজ না প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যে এ কাজটি করে সেদেশের সরকার।
এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ার পরপরই দেশিয় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। সোমবার যে ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, সে পেঁয়াজ আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, ‘বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে দেশে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত থাকলেও আড়ৎদাররা সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন।‘
বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মা সরস্বতী এজেন্সির স্বত্ত্বাধিকারী বাপ্পা মজুমদার জানান, ‘বন্যার কারণে ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে পেঁয়াজ রপ্তানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ভারতের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বাজারে পেঁয়াজের মূল্য সহনশীল রাখতেই ভারত সরকারের কৃষিপণ্য মূল্য নির্ধারণকারী সংস্থা রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।’
বেনাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, ‘ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করতেই কৌশল হিসাবে রফতানি মূল্য দ্বিগুণ করেছে। এমন চলতে থাকলে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকবে। তবে সে দেশের সরকার যদি তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তবে বাজার মূল্য আবার আগের জায়গায় ফিরে আসবে।’
বাংলাদেশে এর চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ হয় ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজে। আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়বে দেশের বাজারে। দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন এলসিতে পেঁয়াজ আমদানি করে ব্যবসায়ীরা লাভ করতে পারবে না বলেও জানান তিনি।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ‘ভারতে মূল্য বৃদ্ধির কারণে আজ দুদিন ভারত থেকে কোন পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। বাংলাদেশি অনেক আমদানিকারকের এলসি ভারতের রপ্তানিকারকদের কাছে পড়ে আছে। অনেকে বাড়তি মূল্য এ্যামানমেন্ড করে পেঁয়াজ আমদানি করবে কিনা সেটা বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে পেঁয়াজের মূল্য বেশি নেওয়ায় বেনাপোলে ভ্রাম্যমাণ আদালত তিন আড়ৎ ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। মঙ্গলবার সকালে শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বেনাপোল কাঁচা বাজার এলাকায় এ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়।
বাজারের মিম বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক শুকুর আলীকে ১০ হাজার, মেহেরাব স্টোরের মালিক সুরুজ মিয়াকে ১৫ হাজার ও সবুর বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক সবুর খাঁনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ, বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসনা শারমিন মিথি জানান, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণায় বেনাপোল বাজারের অসাধু ব্যাবসায়ীরা পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করছে এমন খবরে বাজার পরিদর্শন করা হয়। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দোকানদারদের অর্থদণ্ড প্রদান করাসহ কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। শার্শা উপজেলার সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পৌর স্যানিটারি ইন্সেপেক্টরকে (পেঁয়াজের মূল্য স্থিতি রাখতে) বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।’ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এআই/এনএস/
আরও পড়ুন