ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জনস্বাস্থ্যের পানি পরীক্ষাগার নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি:

প্রকাশিত : ১৬:৫০, ২ অক্টোবর ২০২০ | আপডেট: ১৭:০৫, ২ অক্টোবর ২০২০

ঝালকাঠি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিতল পানি পরীক্ষাগার। যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ লাখ টাকা। তবে নির্মাণাধীন এই ভবনের নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। 

টেন্ডার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী, এসও, ক্যাশিয়ার ও ষ্টোরকিপারের সহযোগিতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ নিম্নমানের মালামাল দিয়ে নির্মাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওয়ার্ক অর্ডার বা কার্যাদেশ প্রধানের ক্ষেত্রে (ম্যাটারিয়াল টেষ্ট রিপোর্ট) নির্মাণ সামগ্রীর মান পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দেয়া শর্ত হলেও ঠিকাদার রিপোর্ট ছাড়াই প্রথম তলার ছাদের ঢালাই পর্যন্ত সম্পন্ন করেছে। 

গত বুধবার এ সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে সাংবাদিকরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাইলে ম্যাটারিয়াল টেষ্ট রিপোর্ট দেখাতে না পেরে রিপোর্ট জমা না দেয়ার কথা স্বীকার করেন। 

সরেজমিন অনুসন্ধানে ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে গত ফেব্রয়ারি মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর এন্টার প্রাইজ ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি পরীক্ষাগারের দ্বিতল ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছে। তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ৩ লাখ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে বিধি লঙ্ঘন করে ম্যাটারিয়াল টেষ্ট রিপোর্ট ছাড়াই কার্যাদেশ দিয়েছে। 

গত ৯ মার্চ নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম ঝালকাঠি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের যোগদানের পরেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। ইতিমধ্যে ভবনের প্রথমতলার ছাদ ঢালাইও সম্পন্ন করলে ম্যাটারিয়াল টেষ্ট রিপোর্ট ছাড়াই কাজ করার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। 
নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের অভ্যন্তরে সকলের চোখের সামনে এ নিম্নমানের কাজ চললেও দায়িত্বপ্রাপ্ত এসও অমিত কর্মকার ১ লাখ টাকার বিনিময়ে কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। নিম্নমানের ইট-খোয়া দিয়ে, ১০টা খোয়া-বালুতে ১টা সিমেন্ট ব্যবহার করে কাজ করলেও কেউ টুশব্দটিও করছেন না। 

এ বিষয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর (বুধবার) দুপুরে কয়েকজন সাংবাদিক নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলামের সাথে আলাপকালে জানায়, ‘রিপোর্ট দেখতে চাইলে তিনি জাহাঙ্গীর এন্টার প্রাইজের পুরো ফাইলটি সামনে আনেন। অনেক ঘাটাঘাটির পর অফিস সহকারীসহ কয়েকজনকে ডেকে ঠিকাদারের ম্যাটারিয়াল টেষ্ট রিপোর্ট জমা দেয়নি বলে জানতে পেরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন সহিদুল ইসলাম। এ অবস্থায় টেষ্ট রিপোর্ট ছাড়াই ঠিকাদার কিভাবে একতলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করল জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন।’ 

পরে তিনি বলেন, ‘আমি গত ৯ মার্চ এই জেলায় যোগ দিয়েছি এবং এই কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পূর্বের নির্বাহী প্রকৌশলী দিয়ে গেছেন।’
পরে সাংবাদিকরা ভবন নির্মাণ কাজের স্থলে গেলে সেখানে এসও বা অন্যকোন কর্মকর্তা ছাড়াই কাজ চলতে দেখা যায়। পরে অন্যস্থানে উক্ত কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসও অমিত কর্মকারের সাথে সাক্ষাৎকালে ম্যাটারিয়াল টেষ্ট রিপোর্ট আছে কিনা বা নির্মাণ সামগ্রী মানসম্মত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টেষ্ট রিপোর্ট দেখা তার দায়িত্ব নয়, এটা নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্ব। আমি সয়েল টেষ্ট রিপোর্ট পেয়েছি ও ওয়ার্ক অর্ডার দেখে কাজ শুরু করেছি।’

তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, সাংবাদিকদের কাছে ধরা পরার পর সংশ্লিষ্ট ঠিকারদারের এক পুত্র ষ্টোরকিপার পরেশ চন্দ্রকে নিয়ে বরিশাল পলিটেকনিক্যাল কলেজে যান। সেখান থেকে গত ২০ মার্চ স্বাক্ষরিত একটি ভুয়া ম্যাটারিয়াল টেষ্ট রিপোর্ট সংগ্রহ করে ঘটনা ধামাপাচা দেয়ার চেষ্টা করে। 

এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও দুদকসহ মন্ত্রণালয়ের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।

এআই//আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি