ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

মাল্টা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:২৬, ২ অক্টোবর ২০২০ | আপডেট: ২০:২৯, ২ অক্টোবর ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাড়া জাগিয়েছে মাল্টার চাষ। দিন যতই যাচ্ছে ততই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাল্টা চাষ। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাল্টা বাগানের সংখ্যা। জেলায় ৪টি বাগান দিয়ে মাল্টা চাষের সূচনা হলেও এখন ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৮'শ টি মাল্টার বাগান রয়েছে। ইতিমধ্যে সাইট্রাস জাতীয় এই ফল চাষ করে আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছেন অনেকেই। 

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৩ কোটি টাকার মাল্টা উৎপাদিত হবে। এবছর জেলায় প্রায় ৭৬ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হচ্ছে। যা থেকে প্রায় ২০ মেট্রিকটন মাল্টা উৎপাদিত হবে। এছাড়াও মাল্টার ফলন ভাল হওয়ায় চাষীরা খুবই উৎফুল্ল। ফরমালিনমুক্ত ও সুস্বাদু  হওয়ায় জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসছেন মাল্টা কিনতে। ২০১৩-১৪ সালে সাইট্রাস ডেভালাপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ২০১৪/১৫ অর্থবছরে প্রথম মাল্টার চাষ শুরু হয়। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেকেই। 

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মাল্টা বাগান ঘুরে দেখা যায়, এক সময় আমদানি করা মাল্টার দিকে সবাইকে তাকিয়ে থাকতে হলেও সেই মাল্টা এখন ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলায়। বাগানজুড়ে সবুজ মাল্টার সমাহার মূহুর্তেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। টসটসে রসালো এই ফলের ভারে প্রতিটি গ্রাছের ডালপালা নুইয়ে পড়ছে। প্রতিটি গাছেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাল্টা এসেছে। ফলন ভালহওয়ায় চাষীদের চোখে মুখে আনন্দের ছাপ। তবে জেলার বিভিন্ন স্থানে মালটার চাষ
হলেও বিজয় নগরের আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এখানে আবাদকৃত মাল্টার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে বারী-১ ও বারী-২। কথা হয় মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মেরাসানী গ্রামের মাল্টা চাষী সোহাগ মিয়ার সাথে। 

তিনি জানান, ২০১৫ সালে আফ্রিকায় যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। চোখে মুখে যখন হতাশার ছাপ তখন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ২০১৫ সালে ৭৫ শতক জায়গায় শুরু করেন মাল্টার চাষ। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা উন্নত মানের ৭৫টি চারা দিয়ে তার মাল্টা বাগানের শুরু। এখন তার বাগানে রয়েছে ২ শতাধিক মাল্টা গাছ। যা থেকে প্রতি মৌসুমে খরচ বাদ দিয়েও তার আয় হয় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। তিনি এখন অনেকটা স্বাবলম্বী। তার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার অনেকেই এখন মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু হওয়ায় প্রতি কেজি মাল্টা ১৫০ টাকা দরে বাগান থেকেই নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। 

অপর মাল্টা চাষী আব্দুল আলিম জানান, বেকারত্ব ঘোচাতে দীর্ঘ ২০ বছর প্রবাস জীবন শেষে ২০১৩ সালে দেশে ফিরেন। সিদ্ধান্ত নেন দেশেই কিছু করার। ২০১৩ সালে নিজ বাগানে ৪০ শতাংশ জায়গায় মাল্টার চাষ শুরু করেন। প্রথমে তার বাগানে ৭৩টি চারা থাকলেও এখন বাগানের পরিধি আরো বেড়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় খারচ বাদেও চলতি মৌসুমে তার লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন। 

বিজয়নগর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাদিউল ইসলাম ভূইয়া বলেন, প্রথমে মাল্টা চাষের বিষয়টি স্থানীয় কৃষকরা হালকাভাবে নিলেও এখন এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে অনেকে চাষীই এখন মাল্টা চাষে ঝুকছে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার বলেন, কৃষকদের মাঝে মাল্টার চাষ ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বিশেষ করে সাধারণ কৃষকরা প্রকল্পের সহায়তা ছাড়াও নিজ উদ্যোগে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাল্টার বাগান করছে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। নতুন উদ্যোক্তাদের সফলতা সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করায় মাল্টা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ১৩ কোটি টাকার মাল্টা উৎপাদিত হবে। কৃষি বিভাগের
পক্ষ থেকে চাষীদের সর্বত্মক সহয়াতা দেয়া হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই মাল্টা পুষ্টির চাহিদা পূরনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
কেআই// 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি