ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

শত নির্যাতন সয়েও সম্ভ্রমটুকু রক্ষা করতে পেরেছি: নোয়াখালীর ওই নারী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৪০, ৫ অক্টোবর ২০২০ | আপডেট: ২৩:২৯, ৫ অক্টোবর ২০২০

Ekushey Television Ltd.

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার এক মাস পর যখন সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত সেই নির্যাতিত নারীকে উদ্ধার করা এবং সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করাসহ পুলিশ, র‍্যাবের নানা তৎপরতা শুরু হয়েছে।

নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার মো: আলমগীর হোসেন বলেছেন, নির্যাতিত নারী পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নির্যাতনের মুখেও সম্ভ্রমটুকু রক্ষা করতে সক্ষম হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে পুলিশ সুপার বলেছেন, "ওনাকে (ক্ষতিগ্রস্ত নারী) আমরা একাধিকবার প্রশ্ন করেছিলাম, উনি বলেছেন যে, ওরা অনেক নির্যাতন করেছে। কিন্তু আমি আমার সম্ভ্রমটুকু রক্ষা করতে পেরেছি। কিন্তু তারা এই ভিডিওটা করে ফেলেছে। এই ঘটনার পরও তারা আমাকে একাধিকবার কুপ্রস্তাব দেয় এবং ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার হুমকিও দেয়। আর শেষপর্যন্ত তারা ভিডিওটি ছেড়ে দিয়েছে।"

ঘটনার এতদিন পর ছড়িয়ে পড়া ভিডিও'র মাধ্যমেই তা পুলিশের নজরে এসেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। আলমগীর হোসেন বলেন, গতকাল রোববার দুপুরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও তাদের নজরে আসে। সেই ভিডিওকে ভিত্তি করে প্রথমে ঘটনাস্থল এবং ক্ষতিগ্রস্ত নারীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা তারা করেন।

পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল এবং এলাকার সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে দুই-তিন ঘণ্টা চেষ্টা করে ভুক্তভোগীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত তারা নোয়াখালী সদরের একটি হাউজিং এলাকা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত নারীকে উদ্ধার করতে পারেন। তখন ক্ষতিগ্রস্ত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

আলমগীর হোসেন বলেন, উদ্ধারের পর মানসিক বিপর্যয় কাটানোর জন্য ক্ষতিগ্রস্তকে প্রথমে কাউন্সিলিং করা হয়েছে। এরপর একটা পরিবেশ তৈরি হলে তখন তারা ঘটনা সম্পর্কে জেনেছেন সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তের কাছ থেকে।

তিনি বলেন, "উনি যে তথ্য বা বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে এটা এক মাস আগে অর্থাৎ গত ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পরে এশার নামাজের আগ মুহূর্তে ঘটনাটি ঘটেছে। ওনাকে আগে প্রলোভন দেয়া হয়, কুপ্রস্তাব দেয়া হয়, তাতে তিনি রাজি ছিলেন না। তখন এলাকার এই কালপ্রিটগুলো টিনের ঘরের দুর্বল দরজা বাইরে থেকে লাথি দিয়ে ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা প্রবেশ করার পর ক্ষতিগ্রস্তের স্বামীকে মারধোর করে একপাশে ফেলে রাখে এবং তার সঙ্গে অবৈধ কাজ করার জন্য চেষ্টা করেছিল।"

"কিন্তু ভিডিওটা দেখলেই বোঝা যায় তারা পারেনি। আমরাও তাকে একাধিক বার প্রশ্ন করেছিলাম। উনি বলেছেন, আমাকে অনেক নির্যাতন করেছে, শত চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমি সম্ভ্রমটা রক্ষা করতে পেরেছি।"

পুলিশ সুপার মো: আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা ঘটনার ভিডিও করে পরে সেটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আরও একাধিকবার ক্ষতিগ্রস্ত নারীকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। এছাড়া আরও নানা রকম হুমকি দেয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নারী পুলিশকে কিছুই জানায়নি।

তবে এখন ক্ষতিগ্রস্তের বর্ণনা অনুযায়ী দু'টি মামলা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ভিডিও ভাইরাল করার জন্য একটি মামলা হয়েছে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। আরেকেটি মামলা হয়েছে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে এবং দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায়।

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তকে শারীরিক নির্যাতন, মারধর এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া তার গোপনাঙ্গে আঘাত করা হয়েছে। এসব অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

তিনি উল্লেখ করেছেন, ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত যাদের চিহ্নিত করেছেন এমন ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের চারজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরার জন্য পুলিশ-র‍্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপরতা চালাচ্ছে। সূত্র- বিবিসি।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি