ধর্ষক দেলোয়ারের উত্থান যেভাবে (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১২:৪৪, ৭ অক্টোবর ২০২০
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূ নির্যাতনের মূলহোতা দেলোয়ার এক সময় ছিলেন সিএনজি চালক। যোগ দেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। বনে যান দলের নেতা। তারপরই মাদক বিক্রেতা, সেখান থেকে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বাহিনীর প্রধান। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে গড়ে তুলেছেন অস্ত্র ও মাদকের রমরমা ব্যবসা। গ্রেফতার হলেও এখনও তার বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় এলাকাবাসী। দেলোয়ারের নিয়ন্ত্রণে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গঠিত মাদকের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটও রয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বেগমগঞ্জের সীমান্তবর্তী পূর্ব এখলাশপুর গ্রামে গড়ে উঠেছে কয়েকটি কিশোর গ্যাং। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা এই বাহিনীগুলোর রুটিন কাজ। এরকম একটি গ্রুপের প্রধান হচ্ছে মো. দেলোয়ার হোসেন। এক সময় সিএনজি চালালেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে দেলোয়ার এখন শীর্ষ মাদক সম্রাট ও এলাকার ত্রাস।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর (৩৫) বসত ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে শ্লীলতাহানি করে দেলোয়ার ও তার সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দল। ঐ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।
গত রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ঘটনার ৩২ দিন পর গৃহবধূকে নির্যাতনের ঐ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেলে তা ভাইরাল হয়ে গেলে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ থেকে দেলোয়ারকে গ্রেফতার করে।
তবে এখনও তার ব্যাপারে ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় এলাকাবাসী। কারণ, দেলোয়ার কিংবা তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বললে বাড়িঘরে হামলা কিংবা জীবনণাশের ভয় রয়েছে।
জানা যায়, পুরো এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে দেলোয়ার বাহিনী। জিম্মি করে রেখেছে এলাকাবাসীকে। কেউ কোন প্রতিবাদ করলে তার ওপর গুলি ও বাড়িঘরে হামলা করা হয়।
ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, ‘ছোট ছোট ছেলে অস্ত্র নিয়ে এসে টাকা দাবি করে। কিছু বললে কিংবা বাধা দিলে ফায়ারিং করে। এমনকি বাড়িতে গিয়ে আক্রমণ করে।’
স্থানীয়রা বলছেন, ‘অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ায় আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে দেলোয়ার।’
তবে ক্ষমতাসীন দলের কোনো পদ-পদবীতে নেই বলে জানান একলাশপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম। তিনি বলেন, ‘পাশের ইউনিয়নের সন্ত্রাসীদের ক্ষমতা দেখিয়ে দেলোয়ার এখলাশপুরে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করছে। সে আমাদের দলের কেউ না, সে দলের কোনো পদ-পদবিতে নেই।’
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নিরক্ষতার কারণে মানুষ তেমন সচতেন না, যার করণে পূর্ব এখলাশপুরে সচেতন মানুষের হার কম। এই ধরনের সন্ত্রাসী গ্রুপের কারণে ভালো পরিবারের সদস্যরাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। মেঠোপথ ও খালপাড়ের কারণে এই এলাকায় পুলিশ তেমন আসে না বলেও জানায় স্থানীয়রা। আর এ সুযোগে সন্ত্রাসীরা তাদের অপকর্ম করে খুব সহজেই পার পেয়ে যায় বলে অভিযোগ তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এই দেলোয়ার অস্ত্র ও মাদকসহ তিনবার গ্রেফতার হন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বারবারই পেয়েছেন মুক্তি। বিচার না হওয়ার প্রবণতার কারণেই সন্ত্রাসীরা আরও বড় অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
এই বাহিনীর সদস্যদের চাঁদা না দিয়ে কেউ কোনো ভবনও তৈরি করতে পারে না। দাবি অনুযায়ী চাঁদা না পেলে বন্ধ করে দেয়া হয় নির্মাণাধীন ভবনের কাজ। বাধ্য হয়েই তাদের চাঁদা দিয়ে কাজ শুরু করাতে হয়।
এদিকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা ওই নারীকে এর আগেও দেলোয়ার দুবার ধর্ষণ করেছেন বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তদলের কাছে এ অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর এ তথ্য জানান।
জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান,‘পুলিশ এখন অনেক বেশি তৎপর। কোনো বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিই। ইতিমধ্যে আমরা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।’
এআই//এমবি
আরও পড়ুন