ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বনগাঁ`র ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি আমদানিকারকেরা

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:০৬, ১২ অক্টোবর ২০২০ | আপডেট: ১৭:৩৬, ১২ অক্টোবর ২০২০

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ পৌরসভার মেয়রের খামখেয়ালিপনা, আমদানি-রফতানিতে নাক গলানোসহ পৌরসভার কালিতলা পার্কিং সৃস্টি করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা ট্রাকগুলো জোরপূর্বক পেট্রাপোল বন্দরের সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউজ কর্পোরেশনের টার্মিনালে না পাঠিয়ে চাঁদার দাবিতে কালিতলা পার্কিংয়ে রেখে দেওয়ার কারণে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ হওয়ার পথে। 

ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলি পেট্রাপোলে প্রবেশের আগে ২০ দিনেরও বেশি সময় অপেক্ষা করা হয়। বনগাঁও পেট্রাপোল স্থলবন্দরে সিন্ডিকেট কর্তৃক অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়মের কারণে অযৌক্তিক বিলম্ব বাংলাদেশি আমদানিকারকদের জন্য নতুন উদ্বেগের বিষয়  হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তারা সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি পেতে পারেনি। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই বলছে তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে।

সিরিয়ালের নামে বনগাঁর এর অধীনে বন্দরের ভারতীয় অংশে পার্কিং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেনাপোলগামী পণ্যবাহী ট্রাক ২০ দিনেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করা হয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাকগুলি পেট্রাপোলে প্রবেশের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে জোর করে বনগাঁ পৌরসভার নামে তৈরি করা পার্কিংয়ে রাখা হয়, যার ফলে আমদানিকারকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন। পার্কিংয়ে যে কয়দিন পণ্যবাহী ট্রাক থাকবে সে কয়দিনের টাকা ভারতের রফতানিকারকরা বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছে। অনেকে বিশেষ জরুরীভাবে মাল নিতে চাইলে বনগাঁ সিন্ডিকেটের সাথে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে মাল নিয়ে থাকেন। ওখান থেকে প্রতিদিন নিজেদের ইচ্ছেমত কবে কোন ট্রাক বাংলাদেশে যাবে তা তরাই নির্ধারণ করে দেয়ালে কাগজ সেটে দেন। দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে আমদানিকৃত পণ্যগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তদুপরি, শিল্পের কাঁচামাল সময়মতো কারখানায় পৌঁছাতে না পারায় শিল্প কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মক ভাবে। ট্রাক চালকরাও এই প্রক্রিয়াটিতে লোকসানে পড়ছে। 

পেট্রাপোল স্থলবন্দরটির বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়েছিল বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৯৭২ সালে। ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতা বন্দর থেকে মাত্র ৮৪ কিলোমিটার দূরে বেনাপোল বন্দর। মসৃণ যাতাযাতের কারণে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা আমদানিও রফতানি কার্যক্রমের জন্য রুটটিকে পছন্দ করেন। আমদানি করা আইটেমগুলির বেশিরভাগই শিল্পের কাঁচামাল। দেশের চলমান ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্বদাতা বেনাপোল বন্দর। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে চট্রগ্রামের পরেই বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার আমদানি বাণিজ্য হয়। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসে। নানা সমস্যায় এ পথে আমদানি কমে যাওয়ায় গত তিন বছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীদের মতে, কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রাক সমস্ত প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মাত্র পাঁচ ঘন্টার মধ্যে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছতে পারে। তবে, চাঁদাবাজির অভিযোগে বনগাঁ পৌরসভার আওতাধীন কালিতলা পার্কিংয়ে ট্রাকগুলি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে এ অনিয়ম চলে আসলেও সিন্ডিকেটের হাত থেকে কোনোভাবে মুক্তি মিলছে না ব্যবসায়ীদের। এই ঝামেলার কারণে, কিছু ব্যবসায়ী বন্দরের মাধ্যমে তাদের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ত্যাগ করেছেন, যার ফলে সরকারের আয়ও হ্রাস পেয়েছে।

আমদানি পণ্যবহনকারী ভারতীয় ট্রাক চালকেরা বলছেন, বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের আগেই ইচ্ছের বিরুদ্ধে বনগাঁ কালিতলা পার্কিংয়ে সিরিয়ালের নামে পণ্যবাহী ট্রাক ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। সিরিয়ালের জন্য ট্রাক ভেদে ৫০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এতে তারা দ্রুত পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাতে পারেন না। এছাড়া তারা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

বেনাপোল সিএন্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, বনগাঁ পার্কিংয়ে এই চাঁদাবাজি অনেক ব্যবসায়ী তাদের আমদানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করা সত্তে¡ও আমদানিকারকরা এখনও কোন স্বস্তি পাননি। 

বেনাপোল বন্দর ট্রাক ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী জানান, বাংলাদেশ থেকে রফতানি বাণিজ্যে বেনাপোল বন্দর এলাকায় কোনো ট্রাক পার্কিং বা চাঁদাবাজি নেই। কিন্তু ভারত থেকে আমদানির সময় বনগাঁয় পার্কিং বানিয়ে নীরব চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন,পার্কিংয়ে দিনের পর দিন ট্রাক আটকে থাকায় পণ্যের মান খারাপ হয় এবং কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। কার্গো ট্রাকগুলি একদিনে কলকাতা থেকে বেনাপোল বন্দরে যাতে পৌঁছতে পারে সে ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা না করলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভারতীয় ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেট জিম্মি করে রেখেছে। ভারতীয় হাই কমিশনারসহ বিভিন্ন মহলে আবেদন করার পরেও আমরা কোনও সমাধান পাচ্ছি না।

বিষয়টি স্বীকার করে পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী বলেন, আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল জানান, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বনগাঁ পার্কিংয়ের অনিয়মের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনেকবার কথা বলা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে। 
কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি