দুঃসময়ে দাঁড়ালেও সুসময়ে উপেক্ষিত রাবির চঞ্চল ও পিন্টু
প্রকাশিত : ১১:৫৯, ১৮ অক্টোবর ২০২০ | আপডেট: ১২:০৭, ১৮ অক্টোবর ২০২০
কামরুজ্জামান চঞ্চল ও আহসানুল হক পিন্টু
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে গত ১ মার্চ। কিন্তু করোনা সংকটে এখনও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। যদিও কেন্দ্রের নির্দেশে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কমিটি অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছিল। সেই খসড়া তালিকায় ছাত্রলীগের কয়েকজন ত্যাগী নেতার নাম বাদ পড়ায় এবং কিছু হাইব্রিড আওয়ামী লীগের নাম তালিকায় থাকায় অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্রীয় সাংসদ।
ফলে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি সংশোধন করে আওয়ামী লীগের ত্যাগীদের সংযোজন এবং সুবিধাভোগীদের বাদ রেখে পুনরায় জমা দিতে বলা হয়েছে। আগের প্রস্তাবিত কমিটির একটি তালিকা গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে।
যেখানে সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপককে। কিন্তু বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০১ সালে জীবন বাজি রেখে যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের ঠাই মিলেনি। এ নিয়ে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মাঝে নানা জল্পনা-কল্পনা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এছাড়াও যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনে মূল নেতৃত্বে ছিলেন, স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সাথে দলকে সুসংগঠিত করছেন এমন কাউকে এবার কমিটিতে রাখা হয়নি বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
মূল পদের বাইরে সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ গুরুত্ববহন করে। এসব পদে নেতৃত্বকে বিকশিত ও পরীক্ষিত নেতৃত্বকে সম্মানিত করা হয়। অন্যদিকে দলের যেকোন প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলায় পরীক্ষিত নেতারাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। কিন্তু ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে যোগ্যদের স্থান দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
মূল নেতৃত্বের মধ্যে শুধুমাত্র মহানগর সভাপতির আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নাইমুল হুদা রানাকে দ্বিতীয়বারের মতো যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুর্দিনের সাবেক আহ্বায়ক কামরুজ্জামান চঞ্চল গত মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে জায়গা না পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। এবার তিনি জেলা ও মহানগর দুই প্রস্তাবিত কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন।
এমতাবস্থায় মহানগর ও রাবির একাধিক সিনিয়র নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘কামরুজ্জামান চঞ্চলকে যিনি আজকের প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালে রাজশাহীতে রাজনৈতিক সফরে এসেছিলেন। সে সময় স্বয়ং নিজে উপস্থিত থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব দেন। দুর্দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে পেলেও সুসময়ে স্থানীয় নেতারা ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে চান না।’
একইভাবে উপেক্ষিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টুও।
এ বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক কামরুজ্জামান চঞ্চল বলেন, ‘২০০১ সালের পর যখন সারা বাংলাদেশে ছাত্রলীগ দাঁড়াতে পারছিল না তখন আমাকে রাবি ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আর আজ আমাদের মতো যারা জীবন বাজি রেখে দলীয় কার্যক্রম করেছিল তারা আজ পদ-পদবী থেকে উপেক্ষিত। তারপরেও বলতে চাই, আমরা বঙ্গবন্ধুর অনুসারী জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী, দলের দুঃসময়ে আবারও আমরাই দাঁড়াবো।’
এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘আমরাও চাই ত্যাগী, যোগ্য ও বিতর্কমুক্ত নেতাদের নিয়ে প্রস্তাবনা কমিটি কেন্দ্রে পাঠাতে। মূলত দলের জন্য যারা কাজ করবেন, তারাই নেতৃত্বের সুযোগ পাবেন।’
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন জানান, ‘আওয়ামী লীগের চরম দুর্দিনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশেষ করে যারা জীবন বাজি রেখে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তাদের প্রতি সুদৃষ্টি থাকবে।’
এআই/এসএ/
আরও পড়ুন