ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বাবার হাতে মা খুন, বাঁচার আকুতি দু’বোনের

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৮:৪৯, ২৭ অক্টোবর ২০২০

এতিম দুই বোন মহিমা ও মৌমিতা (বড়)

এতিম দুই বোন মহিমা ও মৌমিতা (বড়)

Ekushey Television Ltd.

বড় বোন মৌমিতা ৮ম শ্রেণীর এবং ছোট বোন মহিমা ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। নাটোরের তেবাড়িয়া ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে ওদের বাড়ি। একটি ছনের তৈরি ঘরে তাদের বসবাস। মা দিন মজুরি করলেও বেশ আনন্দেই কাটছিল শিশু দুই বোনের জীবন। কিন্তু তাদের সেই আনন্দকে নিমিষেই কেড়ে নেয় বাবার রক্তচক্ষু ও সন্ত্রাসী আচরণ। 

সোমবার (২৬ অক্টোবর) রাতে পাষণ্ড বাবা তাদের মাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পশুর মতো কুপিয়ে হত্যা করে বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে রেখে যায়।

মায়ের এমন মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠেছে অমানিষার কালো রাতের মতো। এখন তাদের ভরণ-পোষণ বা লেখাপড়ার খরচ মেটাবে কে? লেখাপড়া হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু খাবার জুটবে কোথা থেকে। 

মা জীবিত থাকাকালীন একবেলা হলেও খাবার জুটেছে। শত কষ্ট হলেও তাদের দুই বোনের আবদার মিটিয়েছেন প্রয়াত মা আনোয়ারা বেগম শিল্পি। পাষণ্ড বাবা মঈনুল হোসেন মনির সোমবার রাতে মাকে ঘরের বাইরে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করার পর তারা এখন এতিম। এখন ওদের ভবিষ্যৎ কেবলই অন্ধকার।

বড় বোন মৌমিতা জানায়, তার বাবা একজন ভবঘুরে প্রকৃতির। প্রায় সময়ই বেকার থাকেন। বাড়িতে থাকেন না। বলেন ঢাকাতে কাজ করেন। মাঝে মধ্যেই কোথা থেকে এসে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া-ঝাটি বাধিয়ে বসেন। সোমবার রাতের ওই ঘটনার কদিন আগে তার বাবা বাড়িতে আসেন। 

তার বর্ণনা মতে, ঘটনার রাতে আমি পাশেই নানার বাড়িতে ছিলাম। রাতে গ্রামে মানুষের কোলাহলে ঘুম ভেঙ্গে গেলে শুনতে পাই- বাবা মাকে মেরেছে। তবে মাকে যে বাবা মেরে ফেলেছে তা জেনেছি সকালে। মায়ের মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ওই রাতে মহিমা ছিল বাবা-মার কাছে।

১১ বছরের মহিমার বর্ণনায়, রাতে বাবা আমার মাকে ঘরের বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর মায়ের গোঙানি আর চিৎকার শুনতে পাই। বাবা যে মাকে মারছে তা বুঝতে পারছি। কিন্তু একদম মেরে ফেলবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। এখন আমাদের কি হবে কাকু? 

আমাদের বাঁচাবে কে- এমন আকুতি ছিল মহিমাদের চোখে মুখে। ওদের আকুতিভরা কথায় উপস্থিত সবার চোখে পানি ছল ছল করছিল। এসময় প্রতিবেশীদের অনেকেই শংকা প্রকাশ করে বলেন- সত্যি তো এখন ওদের দুই বোনের কি হবে?

প্রতিবেশী আবুল হোসেন জানান, ওরা এখন নানার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ওদের নানা বাহার আলী একজন রিক্সা চালক। বয়সের ভারে তিনিও শরীরের শক্তি হারাতে বসেছেন। দুই নাতনি হয়ত আধপেটা খাবার যোগান দিতে পারবেন তিনি। কিন্তু তাদের লেখাপড়া, কাপড়-চোপড়সহ আনুসাঙ্গিক বিষয় দেখবে কে? উপস্থিত অনেকেই এই দুই বোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা প্রকাশ করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান নিজেও শিশু দুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা প্রকাশ করে বলেন, ওদের দুই বোনের জন্য কি করা যায়, তা নিয়ে পরিষদে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিবেন। এছাড়া নাটোরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজসহ স্থানীয় হৃদয়বানদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন। তিনি ওই দুই শিশু কন্যার জন্য বিত্তবানদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান। 

জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং শিশু দুটির সঙ্গে সাক্ষাত করাসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি