ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

শ্রীমঙ্গলে অবৈধ বালু উত্তোলণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসন

বিকুল চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার:

প্রকাশিত : ১৫:৪২, ৩০ অক্টোবর ২০২০

মামলাজনিত কারণে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৯৫ ভাগ পাহাড়ী ছড়াগুলো থেকে বালি উত্তোলনের নৈমিত্তে বন্ধ রয়েছে ইজারা। কিন্তু থেমে নেই বালু উত্তোলন। প্রতিনিয়তই এই সব ছড়া থেকে এক শ্রেণীর অসাধু লোক তা উত্তোলণ করে বিক্রি করে আসছেন। এদিকে পুরো উপজেলা ব্যাপী ছড়িয়ে থাকা পাহাড়ী ছড়াগুলো থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ঠেকাতে রীতিমতো হীমসিম ক্ষেতে হচ্ছে প্রশাসনকে।

পর্যটন এলাকা থাকায় প্রশাসনের পটোকলের চাপসহ অনান্য কাজের ফাঁকে প্রতিনিয়তই অভ্যাহত রয়েছে অভিযান। গত কয়েক মাসে ৫০টিরও বেশি অভিযানে প্রশাসন প্রায় ৬৭লাখ ৩৯ হাজার টাকার বালু আটক করে। যা পরবর্তীতে নিলামে বিক্রি করেন।  এ অবস্থায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বালুচক্র শুরু করেছে রাতের আধারে বালু উত্তোলন। কিন্তু  প্রশাসনও ছাড় দিতে নারাজ। মধ্যরাতে গিয়েও আটক করছেন বালু। অভিযানের ধারাবাহিকতায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন বুধবার রাতেও শ্রীমঙ্গল কালাপুর এলাকা থেকে ৮শ’ ২৬ ঘনফুট বালি আটক করেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৫নং কালাপুর  ইউনিয়নের কালাপুর বাজারের পূর্ব পার্শ্বে আনসার ক্যাম্পের পাশবর্তী এলাকা থেকে স্তুপ করে  রাখা ৮২৬ ঘনফুট বালু জব্দ করেন। তিনি জানান, মাজদিহি চা বাগানে কিছু সরকারী, কিছু ব্যক্তিগত ও চা বাগানের জায়গায় কিছু লোক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে, যাদের নাম তারা সরেজমিনে এলাকাবাসীর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। বালু আটকের সময় তাদেরকে না পাওয়ায় আটক করা না গেলেও তাদের বিরু্দ্ধে মামলা রজু করা হয়েছে।

 
এ অভিযানে আরো সহযোগিতা করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশিনার (ভুমি) মো. নেছার উদ্দিন  শ্রীমঙ্গল থানার এস আই মো. আলমগীর হোসেন, উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারি তসিলদার মনসুর আহমেদ, ভূমি অফিসের মিউটেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট সৈয়দ মুত্তাকিন বিল্লাহ ও ৫নং কালাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মুজুল। 

অভিযানে অংশনেয়া শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশিনার (ভুমি) মো. নেছার উদ্দিন জানান, জব্দকৃত বালু উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করা হবে। তিনি জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ছোট বড় প্রায় ২৮টি ছড়া রয়েছে। বালু প্রবাহিত এ ছড়াগুলো একসময় নিয়মিত ডাক হতো। এখান থেকে সরকারী কোষাগারে প্রচুর পরিমানে রাজস্ব জমা হতো। এখন ডাক হয় মাত্র দুটি। মামলাজনিত কারণে বর্তমানে তা ইজারা দেয়া বন্ধ রয়েছে। তবে অবৈধ বালু ‍ উত্তোলণকারীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম আরো বলেন, যারা এই বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হচ্ছে। যারা ভবিষ্যতেও এই অপরাধ করবে  প্রশাসন কঠোর হাতে তাদের দমন করবে। তিনি বলেন, সাধারণ অভিযানের পাশাপাশি গত কয়েক মাসে ২৪টি মোবাইল কোট পরিচালনা করেন। এ সময় অনেক অভিযুক্তকে সাজা দিয়ে জেল হাজতেও প্রেরণ করেছেন। গভীর রাতে যখন তারা এই বালুগুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, এগুলো পুলিশের পক্ষে বা প্রশাসনের পক্ষে প্রতিহত করা কঠিন। 

এসময় তিনি এলাকাবাসীকে অনুরোধ করেন  রাতে বা দিনে অনুমোদন ছাড়া ছড়াগুলো থেকে কেউ বালু উত্তোলন করলে প্রশাসনকে জানাতে। যত রাতই হোক এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গলে ২৮টি বালু মহালের মধ্যে সাধারণ বালু মহাল ২টি এবং ২৬টি সিলিকা বালুর মহাল। আর এই ২৬টি মহাল নিলাম হয়ে থাকে খনিজ মন্ত্রনালয় থেকে। এতোদিন মামলার জটিলতা ছিল। এখন মামলার জটিলতা শেষ হয়েছে। তাই জেলা প্রশাসন থেকে খনিজ মন্ত্রনালয়কে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষে তা ইজারা প্রদানের অনুরোধ করা হয়।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মসুদুর রহমান মসুদ জানান, শ্রীমঙ্গলের শিয়ালছড়া ও বিলাস ছড়া তিনি বাৎসরিক ২৯ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন। সবগুলো ছড়া ইজারা হলে সরকার বছরে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব পেতেন। বর্তমানে এই ছড়াগুলো থেকে সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছেন না। আর যে ছড়া থেকে বালু উঠানো হয়না সেগুলোর বালু হাওরে গিয়ে হাইল হাওর ভরাট হচ্ছে। 

উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছালিক আহমদ জানান, পরিবেশবাদী একটি সংগঠনের করা মামলার কারণে বহু বছর ধরে বালুর ঘাট ইজারা বন্ধ। এতে সরকার বছরে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে উত্তোলন করতে না পারায় এই বালুতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হাইল হাওর। কমছে ছড়াগুলোর নাব্যতা। ফলে বর্ষায় ছড়ার পাড় ডুবে ফসলী জমি ও মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠে। এ অবস্থায় মামলা সংক্রান্ত জটিলতার অবসান করে সবগুলোর ইজারা দিলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনও কমে যাবে বলে তিনি জানান।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি