এনায়েতপুরে ভিখারী ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একুশে ফোরামের ইলিশ উৎসব
প্রকাশিত : ১৯:৫০, ২ নভেম্বর ২০২০
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যমুনায় অভিযানে উদ্ধার মাছে ভিখারী, প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের নিয়ে ইলিশ উৎসব করেছে একুশে টেলিভিশনের মানবিক সেবা সংগঠন একুশে ফোরাম। চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা ইয়াসমিনের দেয়া এই ইলিশে রোববার বিকেলে ফোরামের উদ্যোগে নির্মিত শহীদ মিনার বাগানে এই আয়োজন করা হয়। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনটি এলাকায় আলোড়ন ও প্রশংসা কুড়িয়েছে।
জানা যায়, আকাল থাকায় এক সময় এলাকার বিত্তশালীরাই মুল্যবান ইলিশের স্বাদ নিত। ৯০ ভাগ মানুষেরই ভাতের থালায় পাতে পড়তো না বাঙালীর ঐতিহ্যের এই মাছ। তবে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী থাকাকালে ১৯১৪ সালের দিকে ইলিশ বিলুপ্ত রোধে তার নেতৃত্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করায় প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ ঘোষনা করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারো ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বংশ বৃদ্ধিতে সরকার ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা জারি করায় উত্তরবঙ্গের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চৌহালী উপজেলার দক্ষীণ সীমান্ত ব্রিদাশুরিয়া পর্যন্ত এবং এনায়েতপুর, শাহজাদপুরের যমুনা জুড়ে কেবলই ইলিশের ছড়া-ছড়ি। প্রশাসনের অভিযান থাকা সত্যেও কৌশলে চুরি করে শত-শত জেলেরা ধরছে মা মাছ। তার পরও অসাধু জেলেদের ধরতে অভিযান চলছে অব্যাহত।
শনিবার দিনভর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে চৌহালী উপজেলা প্রশাসন চালায় অভিযান। এই অভিযানে আটক করা হয় ১৬ জন জেলে, উদ্ধার করা হয় জাল সহ ৬ থেকে ৭ কেজির মত মাছ। এই মাছ সেদিন বিকেলে একুশে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক ডনুর কাছে অসহায়দের খাওয়ানোর জন্য তুলে দেয়া হয়। পরে এলাকায় ভিখারী, প্রতিবন্ধী, এতিম শিশু, দিন মজুর ও অসহায় ৫৬ জন মানুষদের সম্মানে রোববার একুশে ফোরাম শহীদ মিনার বাগানে আয়োজন করা হয় ইলিশ উৎসব। এতে ভাতের সাথে ইলিশ ভাজা, ইলিশের ঝোল, মাসকালাই ডালের মুড়ীঘন্ঠ ও শেষে কোমল পানীয় হিসেবে ছিল সেভেন আপ। খাওয়ার আগে দেশ তথা বিশ্ববাসীর জন্য মঙ্গল কামনা করা হয়।
এ ব্যাপারে ভিক্ষুক চৌহালীর ধুবুলিয়া চরের খালেক ন্যাংড়া (৭০), এনায়েতপুরের জালালপুরের বৃদ্ধ জয়নাল আবেদিন ফকির, বাঁশরাড়িয়ার নুর হোসেন কানা, গোপালপুরের ইন্নছ পাগলা, আড়কান্দি চরের মুল্লুক চাঁন কানা, বাক্ষ্মনগ্রামের হান্টু ফকির জানান, আমরা আসলেই অভিভুত হয়েছি আমাদের মত অসহায়দের সম্মান দিয়ে আপ্পায়ন করানোয়। এ সময়ে এলাকার কম বেশী অনেকের পাতেই ইলিশ পড়ে। শুধু আমরাই খেতে পারিনি। ইলিশ মাছ এভাবে খেতে পারবো ভাবিনি। তাই ইউএনও মহোদয় ও আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
এদিকে ইলিশ উৎসবের এ আয়োজনের সাথে জড়িত একুশে ফোরামের সভাপতি আখতারুজ্জামান তালুকদার ও সাধারন সম্পাদক ফজলুল হক ডনু জানান, নিজেদের ব্যক্তি সত্তা থেকেই আমরা সংগঠনের উদ্যোগে মানবিকতায় নিবেদিত থাকি সারা বছর। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিজেদের উদ্যোগে আমরা গত ২০০৫ সাল থেকে কাজ করছি। ভিখারী, প্রতিবন্ধীদের জন্য ইলিশ উৎসবের আয়োজন করতে পেরে আমরা নিজেরা খুবই আত্মতৃপ্ত। বিশেষ করে ইউএনও আফসানা ইয়াসমিনকে ধন্যবাদ জানাবো অসহায়দের মুখে ইলিশ তুলে দেয়ার জন্য।
আরকে//
আরও পড়ুন