ভারতে কারাভোগ শেষে ৩০ বাংলাদেশিকে বেনাপোল দিয়ে হস্তান্তর
প্রকাশিত : ২২:৪২, ১৩ নভেম্বর ২০২০ | আপডেট: ২২:৫৭, ১৩ নভেম্বর ২০২০
ভালো কাজের প্রলোভনে পড়ে বিভিন্ন সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ভারতে পাচার হওয়া ৩০ কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে স্বদেশে ফিরেছে।
শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে তাদেরকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
এরা বিভিন্ন সময়ে পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়ে ভারতে পাচার হয়ে যায়। পরে সেখানে পুলিশের হাতে আটক হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা খেটে দু’দেশের সরকারের দেওয়া বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে স্বদেশে ফেরে।
ফেরত আসারা হলো, নওগাঁ জেলার কাথাপুকুর গ্রামের জহির আলীর ছেলে শহিদ (১৪), চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার গাইপাড়া গ্রামের নাইমুল হকের ছেলে মিলন (১৪), পিরোজপুর জেলার লক্ষনা নতুনপাড়ার শাহিন তালুকদারের ছেলে সাব্বির তালুকদার (১২), চট্রগ্রাম জেলার খানদোলার বাজার এলাকার মুজিব শেখের ছেলে ইব্রাহীম শেখ (১৪), ঠাকুরগাঁও জেলার বস্তপুর গ্রামের শুনিল রায়ের ছেলে বিপ্লব রায় (১৪), পাবনা জেলার বনগা বাড়ী গ্রামের তাহের আলীর মেয়ে মাহফুজা খাতুন (১৫), সাতক্ষীরা জেলার চম্পাপুর গ্রামের বাবুল সরদারের মেয়ে চুমকি খাতুন (১৪), রাজশাহী জেলার গোপীনাথপুর গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে লাবনী আক্তার (১৬), গোপালগঞ্জ জেলার খোলাথিয়া গ্রামের মুজিবর সিকদারের মেয়ে শাপলা সিকদার (১৬), খুলনা জেলার উত্তর মোকামপুর গ্রামের অহিদুলের মেয়ে নীলা খাতুন (১২), চট্রগ্রাম জেলার হালিশহর এলাকার রশিদ হাওলাদারের মেয়ে উম্মে কুলসুম (১৩), খুলনার জেলার তেরখাদা গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে জুমিনি আক্তার (১৬), খুলনা জেলার পারহাজি গ্রামের মুক্তার শেখের মেয়ে সায়রা খাতুন (১৯), জয়পুরহাট জেলার ভিমপুর গ্রামের কালু শেখের মেয়ে কাকলী (১৬)
মাগুরা জেলার খাসিয়ারা গ্রামের ইলিয়াছের মেয়ে আরুফা খাতুন (৩৫) ও একই এলাকার কালামিয়া মুন্সীর মেয়ে দিলারা (২২), আব্দুস সালমের মেয়ে জান্নাত আরা (৭), রিয়া আক্তার (১৪), সেলিম মিয়ার মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১৬), মিনারা আক্তার (১৮), সালামের মেয়ে রুখসানা আক্তার (৫), ছেলে মোঃ সামি (৩), ঢাকা জেলার নাখালপাড়া এলাকার মমিন হোসেনের মেয়ে মুক্তা আক্তার (১৭), বাগেরহাট জেলার পাথামারা গ্রামের আসলাম খানের মেয়ে তামান্না আক্তার খুসবু (১৭), বাগেরহাট জেলার মাদারপাড়া গ্রামের হুমায়ুন কবিরের মেয়ে হুমাইরা খাতুন (১২), দিনাজপুর জেলার মধ্য বাসুদেবপুর গ্রামের শফি আহমেদের ছেলে আমেদ আলী (১৪), নারায়নগঞ্জ জেলার খাগানদা গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে নুর ইসলাম (১৩), খুলনা জেলার তিপনা গ্রামের রবিন অধিকারীর ছেলে আকাশ অধিকারী (১৩) ও চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার মল্লিকপুর গ্রামের প্রতাপ ঘোষের ছেলে প্রকাশ ঘোষ
(১৬)।
মানবাধিকার সংস্থা যশোর রাইটস এর পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, ফেরত আসাদের আমরা ও মহিলা আইনজীবি
সমিতিসহ কয়েকটি এনজিও গ্রহন করছি। এরা খুব ছোট বেলায় পাচারকারি চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়ে ভারতে যায়। এখন এরা
অনেক বড় হয়ে গেছে। তাই, এদেরকে এদের বাবা-মা, বা এরাও তাদের বাবা-মা-ভাই-বোনদের চিনতে পারবে কিনা আশঙ্কা
রয়েছে। এদেরকে যশোরে নিয়ে আমাদের নিজস্ব শেল্টার হোমে রাখবো। পরে তাদের অভিভাবক নিশ্চিত করে স্ব-স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি সমিতির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর রেখা রানী বলেন, এরা বিভিন্ন সময়ে পাচারকারিদের অপকৌশলের শিকার হয়ে ঠাই হয় ভারতে। পরে সেখানে পুলিশের কাছে আটক হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটে। সেখান থেকে সেদেশের বেসরকারী এনজিও সংস্থা তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে শেল্টার হোমে রাখে। অবশেষে দু’দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে এরা বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে স্বদেশে ফেরত আসে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান কবির বলেন, ফেরত আসাদের বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে তাদের আরো কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বলেন, ফেরত আসারা দীর্ঘদিন যাবত ভারতের জেল খানায় সাজা খাটে। পরে দু’দেশের এনজিও সংস্থা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে তাদেরকে স্বদেশে ফেরার অনুমতি নেয়। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাতে তাদেরকে কয়েকটি এনজিও সংস্থা গ্রহণ করে স্ব-স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য।
কেআই//
আরও পড়ুন