লাখ টাকায় আপোষ শিশু ধর্ষণচেষ্টা!
প্রকাশিত : ১৫:৩০, ১৪ নভেম্বর ২০২০
ইউপি সদস্য আহমদ কবির
ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা লাখ টাকার বিনিময়ে বিচার বসিয়ে সেই ব্যর্থ ধর্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মীমাংসা করার অভিযোগ উঠেছে সাতকানিয়ার ছদাহার ইউপি সদস্য আহমদ কবিরের বিরুদ্ধে।
গত ১২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে ছদাহা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ফজুর পাড়ায় আহমদ কবির মেম্বারের উপস্থিতিতে প্রায় শতাধিক মানুষ নিয়ে এই ধর্ষণচেষ্টার মিমাংসার আয়োজন করা হয়।
জানা যায়- গত ১০ নভেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে ছদাহার ২নং ওয়ার্ডের মোস্তাফিজুর রহমানের বিল্ডিংয়ের ভাড়াটিয়া হাফেজ মোঃ ইলিয়াসের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ১০ বছরের শিশুকন্যা পাশের বাড়ির জকরিয়ার উঠানে ঘুরতে যায়। এসময় ঘরে স্ত্রী না থাকার সুযোগে ওই ১০ বছরের কন্যাশিশুকে টাকার লোভ দেখিয়ে ফুসঁলিয়ে জকরিয়া তার রুমে নিয়ে যায়। পরে তার লোলুপ দৃষ্টি বুঝতে পেরে শিশুটি ভয় পেয়ে পালিয়ে আসার সময় লম্পট জকরিয়ার স্ত্রী তা দেখে ফেলে। স্বামীর কুকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে পার্শ্ববর্তী বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
পরে ক্ষুব্ধ স্ত্রী ধর্ষণ থেকে পালিয়ে যাওয়া ওই শিশু কন্যাটির মার কাছে গিয়ে নিজেই নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে আইনগত অ্যাকশন নিতে বলেন।
পরে ওই কন্যা শিশুর মা আর বাবা তাদের বাড়ির মালিক মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে বিচার দিলে, মোস্তাফিজুর রহমান ইউপি সদস্য আহমদ কবির মেম্বার আর ব্যর্থ ধর্ষক জকরিয়ার ভাই মোঃ জাকিরকে বিষয়টি অবহিত করে। পরে সু-কৌশলে মেম্বার আহমদ কবির নিজেদের মান-সম্মান ও ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে জকরিয়ার কাছ থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ১২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাত ৮টায় জকরিয়ার বাড়িতেই গ্রাম্য শালিসের বৈঠক ডেকে রফাদফা করেন।
এদিকে ওই শিশুটি ও তার মা (জান্নাতুল ফেরদৌস) ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- এই জকরিয়া এলাকার অনেক কন্যা শিশুর সঙ্গে এরকম খারাপ কাজ করার চেষ্টা চালান। সে এলাকায় লম্পট হিসেবে পরিচিত।
জান্নাতুল ফেরদৌস আরও বলেন, আমরা গরীব আর অসহায় এবং এই এলাকার ভাড়াটিয়া হওয়ায় তেমন কিছু বলতে পারছিনা।
এমন ঘটনা গ্রাম্য শালিসে শেষ করা যায় কিনা জানতে চাওয়া হলে ছদাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ চৌঃ বলেন- বিষয়টি আমি শুনেছি। এ সংক্রান্ত কোনও বিচার না করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যকে নির্দেশনা দিয়েছি।
এদিকে টাকার বিনিময়ে ধর্ষণচেষ্টার মতো ফৌজদারী অপরাধ কেন গ্রাম্য শালিসে শেষ করা হলো জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোঃ আহমদ কবির বিচার বসানোর কথা স্বীকার করে বলেন- ধর্ষণের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যা শিশুর পায়ের সেন্ডেল দিয়ে রাতে সমাজের শত শত মানুষের সামনে ব্যর্থ ধর্ষক জকরিয়ার গালে জুতো পিটা করেই শেষ করা হয় বিচারটি। তবে আমি কোনও টাকা-পয়সা নিই নাই।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন বলেন- অভিযুক্ত জকরিয়ার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে ইউপি সদস্য আহমদ কবির জোরপূর্বক গ্রাম্য শালিস বসিয়ে এটা মিমাংসা করেন।
এদিকে জকরিয়ার ভাই জাকির হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি আপোষের কথা স্বীকার করেন এবং লেনদেনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে মসজিদে আছি বলে ফোন কেটে দেন। পরে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সাতকানিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টা আমি শুনেছি। এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এনএস/
আরও পড়ুন