ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

করোনা সংক্রান্ত নির্দেশনা মানছে না মিরসরাইয়ের হাসপাতালগুলো

নুরুল আলম, মিরসরাই

প্রকাশিত : ২০:২০, ২৩ নভেম্বর ২০২০ | আপডেট: ২০:২২, ২৩ নভেম্বর ২০২০

শীতের আগমনের সাথে সাথে দেশের সর্বত্র লাফিয়ে বাড়ছে করোনা। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে জনসচেতনতার পাশাপশি নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। যার মধ্যে সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতালকে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৯টি বিশেষ নির্দেশনাও দিয়েছে সরকার। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে নেই কোন প্রস্তুতি। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা এলাকায় এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নেই কোন উদ্যোগ। ন্যুনতম স্বাস্থ্যবিধিও মানছে না এখানকার অধিকাংশ হাসপাতালগুলো। 

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার বারইয়াহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভা ও মিঠাছরা বাজার এলাকায় মোট ৯টি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক বাণিজ্যিকভাবে স্বাস্থ্য চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে মিরসরাই সদর এলাকার মাতৃকা হাসপাতাল, সেবা আধুনিক হাসপাতাল ও হোপ মা ও শিশু হাসপাতাল। সুফিয়া রোড এলাকায় ভিডিসি মা ও শিশু হাসপাতাল। মিঠাছরা বাজার এলাকায় মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতাল,বারইয়াহাট পৌর বাজার এলাকায় বারইয়াহাট জেনারেল হাসপাতাল, মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতাল, মিরসরাই মাতৃকা হাসপাতাল, সুফিয়া রোড বিডিসি, বারইয়াহাট মেডিক্যাল সেন্টার। যার কোনটিতে কোভিড রোগীর জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। এখানকার বেশ কিছু হাসপাতালে মানা হচ্ছে না ন্যুনতম স্বাস্থ্যবিধি। বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই সরকারে নতুন নিদের্শনা অনুযায়ী ফ্লু-কর্ণার, ট্রায়াজ সিষ্টেম ও কোভিড রোগীদের জন্য আলাদা শয্যা সম্প্রসারণের।

উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনলাইন জুম মিটিং এ কোভিট-১৯ দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ রোধে সরকারের নেয়া ৩০ নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন তৃণমূল প্রশাসনকে। যার মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক সংক্রান্ত নির্দেশনায় ছিল ৯টি উদ্যোগের কথা। যা বাস্তবায়ান করার কথা জেলা সিভিল সার্জন অফিস। অবশ্য মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন গত ১ নভেম্বর জরুরি সভা আহবান করে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগ গ্রহণ করার আহবান জানান।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি জানান, নির্দেশনাগুলো মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। গতকাল রবিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১১টার নাগাদ সরেজমিনে বারইয়াহাট জেনারেল হাসপালে গেলে সেখানে এ ধরণের কোন প্রস্তুতির আভাসও পাওয়া যায়নি। আলাদা শয্যা, ফ্লু কর্ণার ও ট্রায়াজ সিস্টেম দূরে থাক কোভিড রোগীদের সরবরাহের জন্য সামান্য অক্সিজেন ব্যবস্থাও এখানে রাখা হয়নি। তবে এখানে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বলেন,‘আলাদা ফ্লু কর্ণার বা ট্রায়াজ সিস্টেম কারার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ
অথবা উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবুও আমরা সাধারণ হাঁছি-কাশির রোগি দেখছি।’

ওইদিন দুপুর ২টার নাগাদ উপজেলার সুফিয়া রোড এলাকার ভিডিসি মা ও শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এখানেও মানা হচ্ছে না নুন্যতম স্বাস্থ্যবিধি। উদ্যোগ নেই সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নে। হাসপাতালটির অভ্যত্থনা কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের মুখে যেমন মাস্ক নেই, দায়িত্বে থাকা অভ্যত্থনা কর্মকর্তারও মুখে মাস্ক নেই। হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় সেখানেও একই পরিবেশ একই রকম পরিস্থিতি। একটি ঘন বসতিপূর্ণ বাড়িতে আবাসিক ভবনের দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা। এ হাসপাতালের অনুমোদনের ছাড়পত্র নিয়ে রয়েছে ঘাপলা।

বিডিসি মা ও শিশু হাসপাতালের কর্ণধার মো. আলাউদ্দিন দাবি করেন,‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মা ও শিশুদের চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে ফ্লু কর্ণার বা কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আলাদা কর্ণার এবং ট্রায়াজ সিষ্টেম চালুর বিষয়ে আমরা কোন নির্দেশনা পাইনি।’ ওইদিন বিকাল ২টার নাগাদ মিরসরাই সদর এলাকার হোপ মা ও শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়। এখানে সাধারণ স্বাস্থ্য বিধিগুলো মানা হচ্ছে। তবে এখানেও ফ্লু সেন্টার বা ট্রায়াজ সিষ্টেম করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

অবশ্য এ ব্যাপারে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) খালেদা আক্তার বলেন,‘আমরা সব ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। তবে নতুন যে নির্দেশনা এগুলো এখনো আমাদের দেয়া হয়নি। নির্দেশনা আসলে আমরা
বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিবো।’

বেসরকারি হাসপাতালের বেলায় নতুন ৯টি নির্দেশনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা মিটিং করে হাসপাতালগুলো নির্দেশনা দিয়েছি। বিষয়টি আমরা সরাসরি গিয়ে তদারকি করবো।’ 

স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফ্লু কর্ণার, ট্রায়াজ সিষ্টেম বা কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার্থে আলাদা শয্যা তৈরির মত নির্দেশনা না পাওয়া বিষয়ে উপজেলার এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন,‘আমরা এখনো চিঠি দিয়ে তাদের জানাইনি। তবে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছি। শীঘ্রই তা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে আমরা তদারকি করবো।’

এদিকে মিরসরাই বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক অনার্স এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন দাবি করেন,‘সরকারের তরফ থেকে আমরা এ ধরণের কোন নির্দেশনা পাইনি। তবে এখানকার হাসপাতালগুলো সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়াও জরুরি অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। এছাড়া আমরা হাসাতাল মালিকেরা ইতোমধ্যে সমগ্র উপজেলায় বিনামূল্যে জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ, জনসচেতনতায় মাইকিং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি।’
কেআই// 
  


 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি