নওগাঁয় শিক্ষক নির্যাতন, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
প্রকাশিত : ২২:০৯, ১ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ২২:১০, ১ ডিসেম্বর ২০২০
নির্যাতনের শিকার প্রবীণ শিক্ষক নাসিম উদ্দিন (৫৮)
নওগাঁর মান্দা উপজেলার পাজরভাঙ্গা মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে আবাসিক এলাকায় অবৈধ করাতকল স্থাপনের প্রতিবাদ করায় নাসিম উদ্দিন (৫৮) নামের এক প্রবীণ শিক্ষককে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় অবশেষে পুলিশ থানায় মামলা রেকর্ড করে মামলার প্রধান আসামি এরশাদ আলী মন্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ নিয়ে গত সোমবার একুশে টিভির অনলাইনসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুলিশ নড়েচড়ে ওঠে। ওইদিন রাতেই পুলিশ উপজেলার পাজরভাঙ্গা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
আজ মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত এরশাদ আলী পাজরভাঙ্গা গ্রামের দেলশাদ আলী মন্ডলের ছেলে।
জানা গেছে- রাজশাহীর বাগমাড়া উপজেলার বাসিন্দা প্রবীণ শিক্ষক নাসিম উদ্দিন সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার পাজরভাঙ্গা গ্রামে নিজ মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এলাকায় অবৈধ স'মিলে মানুষের ভোগান্তি দেখে গত বুধবার তিনি তার প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে করাতকলের মালিক দেলশাদ আলী মন্ডলের দুই ছেলে এরশাদ আলী মন্ডল, আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েকজন সহযোগী মিলে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় বিবস্ত্র করে ওই শিক্ষককে অমানবিক নির্যাতন করে।
এসময় গ্রামবাসী ও তার আত্মীয়-স্বজনরা এগিয়ে এসে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। প্রবীণ শিক্ষক নাসিম উদ্দিনকে লাঞ্ছনা আর মারধরের সেই দৃশ্য ধারণ করা হয় মোবাইল ফোনে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। এই ঘটনার পর থেকে প্রবীণ ওই শিক্ষক লজ্জা অপমানে নিজ বাড়িতে এখন অন্তরীণ হয়ে আছেন।
নির্যাতনের শিকার প্রবীণ শিক্ষক নাসিম উদ্দিন বলেন- আবাসকি এলাকায় আপনারা এভাবে স'মিল চালাতে পারেন না। বলার পরপরই এরশাদ আলীর নেতৃত্বে ৪/৫ জন মিলে আমাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে। আবার সেই দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে লজ্জায় আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। বুধবার বিকেলেই থানায় ৪ জনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ করি। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
তবে স’মিল মালিক দেলশাদ হোসেন মন্ডল দাবি, আইন মেনে গত ৩৫ বছর ধরে স’মিলটি চালানো হচ্ছে। কোনওদিনই কারো সমস্যা হয়নি। মূলত নাসিম উদ্দিনের জামাতা রেজাউল ইসলামের কাছে পাওনা রড সিমেন্টেরে ৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে এই উদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিক্ষক নাসিম উদ্দিনকে বিবস্ত্র করার অভিযোগ অস্বীকার করছেন তিনি।
এদিকে এই ঘটনায় বিচার চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও নির্বিকার ছিল পুলিশ। এ নিয়ে একুশে টিভি অনলাইনসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নড়ে চড়ে ওঠে পুলিশ। সোমবার রাতেই থানায় মামলা রের্কড করে প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীনুর রহমান বলেন- এই ঘটনায় থানায় মামলা রেকর্ডভুক্ত করেই প্রধান আসামি এরশাদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
এনএস/
আরও পড়ুন