ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

মৌলভীবাজারে সবজি কালেকশন পয়েন্ট বাজারে রুপান্তরিত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ২১:৫৮, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

মাত্র  এক বছরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে স্থাপিত কৃষকের সবজি কালেকশন পয়েন্ট স্থান নিয়েছে জাকজমকপূর্ণ বাজারে। সেখানে গড়ে উঠেছে মুদির দোকান, চায়ের দোকান, কাপরের দোকান,সেলুনসহ মানুষের প্রয়োজনীয় অনান্য সামগ্রী। শ্রীমঙ্গলে অধিক সবজী চাষের দুটি এলাকা নির্ধারণ করে মাত্র এক বছর আগে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম  উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের পাড়ের টং গ্রামে ও মির্জাপুর ইউনিয়নের ছাত্রাবটে উদ্বোধন করেন দুটি সবজী কালেকশন পয়েন্ট। 

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, কৃষকরা সবজী চাষ করে শহরে এনে বিক্রি করতে তাদের সময় ও অতিরিক্ত খরচ হতো। এই চিন্তা মাথায় নিয়ে বেসরকারী সংস্থা  আইডিই সূচনা,প্রজেক্ট এর মাধ্যমে, শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের পাড়েরটংগ্রাম ও মির্জাপুর ইউনিয়নের ছাত্রাবট গ্রামে কৃষকের উৎপাদিত সবজি ও ফসল সরাসরি বিক্রি করার জন্য কালেকশন পয়েন্ট সৃষ্টি করা হয়
। 
তিনি জানান, ওই এলাকায় অনেক নারী সবজী চাষী রয়েছেন এ ক্ষেত্রে তাদের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। কালেকশন পয়েন্ট পরিচালনার জন্য একটি কমিটিও করা হয় সেখানেও নারী কৃষককে সম্পৃক্ত করা হয়।

এই কালেকশন পয়েন্টের আরেকটি সুহৃদ সংস্থা লালতীর সীড এর সিলেট বিভাগীয় ব্যবস্থাপক তাপস চক্রবর্তী জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  ও স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার সহ উক্ত বাজার এক বছর আগে উদ্বোধন করেন। তখন থেকেই শুরু হয় এক স্বপ্নের পথ চলা। কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পাওয়ার জন্য নিজেদের ভেতর থেকে পাইকার সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন জায়গায় পাইকারদের সাথে সমন্বয় সাধন করে প্রতিদিন সকালে তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে সেখানে বসে। প্রতিদিন ভোরবেলা কালেকশন বাজারে শুরু হয় কেনাবেচা। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল নিজেদের বাজারে নিয়ে আসে,আর স্থানীয় এবং বাইরে থেকে পাইকাররা এই বাজারে এসে দরদামের মাধ্যমে সবজি ক্রয় করে ট্রাক যোগে নিয়ে যায় দেশের দূরদূরান্তে। 

এ প্রসঙ্গে কালেকশন বাজার পাড়েরটংএর উদ্যোক্তা ও কৃষক নাজমুল হাসান জানান, আমরা লালতীরের ভাল বীজ ব্যবহার করে এই গ্রামে বিপুল পরিমাণ টিয়া করলা, হিরো ঝিঙ্গাও নানা জাতের সবজি উৎপাদন করে আসছি অনেক বছর ধরে। আমাদের উৎপাদিত ফসল গুলো আমরা শ্রীমঙ্গলসহ অন্যান্য বাজারে পাইকারি বিক্রি করার জন্য নিয়ে যেতাম তখন আমাদের পরিবহনের সমস্যা ও উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পেতে অনেক বিড়ম্বনা পেতে হতো, প্রায় সময়ই নানা দুর্যোগে আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতাম। তাছাড়া উপজেলা বাজারগুলোতে আমাদের কৃষকদের বসার জন্য কোন আলাদা জায়গা ও ছিলো না। আমরা পাইকারদের ইচেছর উপরই নির্ভর হয়ে থাকতাম। আজ আমাদের আর এই বিরম্বনা নেই। আমরা নিজেরাই নিজেদের এলাকায় উৎপাদিত ফসল বিভিন্ন পাইকারদের সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে থাকি এ কালেকশন পয়েন্টে। পাইকাররা দুর দুরান্ত  থেকে এসে তাদের পছন্দমতো সবজিগুলো সঠিক দরদাম করে নিয়ে যায়।

 কৃষকরা জানান, এ কালেকসন পয়েন্টের মাধ্যমে আজ আমাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পাচ্ছেন। সবজিগুলো দ্রুত বিক্রি হওয়ার কারণে তারা তাদের দৈনিক কার্যক্রমে অনেক সময় সাশ্রয় হয়। পাশাপাশি তারা আর্থিকভাবে অনেক লাভবানও  হয়েছেন। এ কালেকশন পয়েন্ট সৃষ্টির শুরুতে যারা উদ্যোক্তা এবং কৃষকের পাশে থেকে কৃষি বিভঅগের পাশাপাশি সব সময় পরামর্শ দিয়েছেন আইডিই সূচনা প্রোজেক্টের কৃষিবিদ কানাইলাল দাস , টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট  হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ও লালতীরের তাপস চক্রবর্তী।

কৃষিবিদ কানাইলাল দাস , টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট  হেলাল উদ্দিন ভূইয়া  জানান, কৃষকের আত্মনির্ভরশীল হওয়া এবং তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পাওয়ার জন্য স্থানীয় এই কালেকশন পয়েন্ট সৃষ্টি করা হয় তাদের সূচনা প্রকল্পের মধ্যমে। এই বাজারে কৃষক নিজেরাই এখন তাদের ভেতর থেকে শুধু সবজী নয় বীজ বিক্রেতাও  সৃষ্টি করেছে। গঠন করেছে কালেকশন পয়েন্ট পরিচালনা কমিটিও।   এতে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে  কৃষকরা আর্থিক লাভবান হচ্ছেন। 

তারা আশা প্রকাশ করেন এতে দেশ সমৃদ্ধির পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে । এ প্রসঙ্গে ভালো বীজের উৎস প্রতিষ্ঠান,লাল তীর সীড লিমিটেড এর ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী  আরো জানান, এক বছর আগে কৃষকদের এই গ্রামে যে স্বপ্নের বীজ বুনেছি আমরা সে স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। ভালো বীজ ব্যবহার করে তাদের উৎপাদিত ফসল আজ তারা নিজেরাই সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে নিজেদের বাজারে বিক্রি করছে। এতে একদিকে কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে তেমনি কৃষকের স্বার্থ ও সংরক্ষন হচ্ছে আবার তেমনি নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে।  স্থানীয় কৃষকদের শ্রমে ও পরিকল্পনায় আজ বাজারটি এক পরিপূর্ণ কৃষকের হাটে রূপান্তরিত হয়েছে। যা কৃষকের অধিকার বাস্তবায়নে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। 

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, এ দুটি কালেকশন পয়েন্ট উদ্বোধনের সময় তিনি চিন্তা করেছিলেন  এখানে পাইকার (সবজী ক্রেতা) আসবে কিনা। কৃষক এই পয়েন্ট থেকে তাদের আশানুরুপ দামে সবজী বিক্রি করতে পারবে কিনা। তাই তিনি এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা বাস্তবায়নের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি জানান, বছর ঘুরতেই এটি সফলতা পেয়েছে তা জেনে তিনি খুবেই আনন্দিত। এ জন্য এর সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি