জামালগঞ্জে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়
প্রকাশিত : ১১:৫৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০
‘ভাই, আমি দিনমজুর, দিন আনি দিন খাই। যা পাই, কোনওরকম সংসার চলে। অন্যের জায়গায় ঘর বানাইয়া থাকি। খুব কষ্ট করে মেয়ে দুইটারে লেখাপড়া করাইতেছি। জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নাইনে পড়ে আমার মেয়েটা, সারা বছর ইসকুল বন্ধ, তারপরেও পেট থেকেই বেতন দিতে অইছে। আমার মেয়ে ইসকুলেও যায়নি টিফিনও খায়নি, তবুও খাওয়ার বিল দিছি। কইন এহন আমরা গরিবরা কই যাই?' এমনই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন বুরুজ আলী নামে এক শিক্ষার্থীর দিনমজুর বাবা।
শুধু তিনিই নন, অসংখ্য অভিভাবক সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান ভূষণ চক্রবর্তীর প্রতি ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন।
জানা যায়, করোনাকালেও সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সেপ্টেম্বর থেকেই শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বেতনসহ জলযোগ (দুপুরের টিফিন) বাবদ ৬৩০ থেকে ৭’শ টাকা করে আদায় করা হয়েছে জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, জলযোগে টাকা আদায় একমাত্র প্রধান শিক্ষকের এখতিয়ারেই হয়েছে। সূত্র জানায়, এই বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ১৩’শর মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বোর্ডে নাম রেজিষ্ট্রেশনের সময় ‘জলযোগ (দুপুরের টিফিন) বাবদ ৭’শ থেকে ৬৩০, বেতন ১০৪০ থেকে ৩ হাজার ৫’শ পর্যন্ত, রেজিস্টেশন ২৩০ ও সিলেবাস বাবদ ১০ টাকা নেয়া হয়েছে। বাকী চারটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কি অবস্থা এ নিয়ে
জনমনে বিরুপ প্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মী তার ফেসবুক আইডিতে ওই বিদ্যালয়ের অসংগতির ব্যাপারে স্ট্যাটাস দিলে বিষটি নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। এছাড়া ওই বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যাচ করে প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকবৃন্দ। বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্যেও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন- হেড স্যারের নির্দেশনার পর তারা বেতন ও জলযোগের টাকা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান ভুষণ চক্রবর্তীর সাথে মেবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি মোবাইলে কোনও কথা বলবো না। আমার স্কুলে এসে দেখা করলে আলাপ হবে।
উপরোক্ত অভিযোগটা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মোবাইলে আমার কোনও বক্তব্য নাই। সবকিছু মোবাইলে বলা যাবে না।
জামালগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুল কবীরকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের রশিদ দেখালে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা, এখন দেখলাম। সম্প্রতি একটা নির্দেশনা আছে বেতনের ব্যাপারে, তবে নির্দেশনার আগে টাকা নেয়াটা ঠিক হয়নি। আর জলযোগের টাকা তো নেয়ার কথাইনা। তবুও আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব জানান, বিষয়টি আমি আপনার মাধ্যমে জেনেছি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি বিষয়টি এখন শুনেছি, খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এনএস/
আরও পড়ুন