শেরপুরে হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন
প্রকাশিত : ১৭:৪৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
শেরপুরে হত্যা ও ধর্ষণের পৃথক মামলায় পিতা-পুত্রসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিচারক মো. আকতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- নালিতাবাড়ীর আশরাফুল ইসলাম (৩০), বাদশা মিয়া (৫৮), তার ছেলে ফকির আলী (২৭) ও হাসমত আলী (২৬)।
আদালতসূত্রে জানা যায়, নালিতাবাড়ী উপজেলার ধোপাকুড়া গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে পড়ুয়া ৪র্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে এক যুবকের যাবজ্জীন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত আশরাফুল ইসলাম (২০) নালিতাবাড়ীর ধোপাকুড়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে।
পলাতক থাকায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির অনুপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। নারী ও শিশু আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ২০০৭ সালের ১৪ অক্টোবর ঈদের দিন বিকেলে বোনের বাড়ী থেকে নিজবাড়ী ফিরছিলো ধোপাকুড়া গ্রামের ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ূয়া ওই স্কুলছাত্রী (১২)। পথিমধ্যে একই এলাকার বখাটে আশরাফুল ওই স্কুলছাত্রীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় এবং স্থানীয় পরিচিত হামিদুল মিয়ার ঘরে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে ভিকিটমকে ধর্ষক আশরাফুল পার্শ্ববর্তী ঝিনাইগাতী এলাকায় তার বোনের বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং দ্বিতীয়বার ধর্ষণের চেষ্টা করে। সেসময় ভিকটিম কান্নাকাটি শুরু করলে তাকে বোনের বাড়ীতে রেখে বখাটে আশরাফুল গা ঢাকা দেয়।
এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে পরদিন নালিতাবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলে পুলিশ আসামি আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তদন্ত কর্মকর্তা নালিতাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ২০০৭ সালের ৩০ নভেম্বর বখাটে আশরাফুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। আদালতে বিচারকাজ চলাকালে আসামি আশরাফুল জামিন নিয়ে পালিয়ে যায়।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় ৮ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ মঙ্গলবার আসামি আশরাফুলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় (ধর্ষণের অভিযোগ) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের সাজার রায় ঘোষণা করে আদালত।
অপরদিকে, শেরপুরে চাঞ্চল্যকর তাজেল হত্যা মামলায় পিতা-পুত্রসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।
হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- সদর উপজেলার চান্দেরনগর চক্কারপাড় গ্রামের মৃত আহসান শেখের ছেলে বাদশা মিয়া, তার ছেলে ফকির আলী ও আলিনাপাড়া গ্রামের মৃত মিরাজ আলীর ছেলে হাসমত আলী।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর সদর উপজেলার চান্দেরনগর গ্রামের দিনমজুর তাজেল মিয়াকে পূর্বশত্রুতার জের ধরে বাদশা মিয়া, ফকির ও হাসমতসহ কয়েকজন লোহার রড, লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় পরদিন তাজেলের ভাই মোঃ জিয়ার বাদী হয়ে সদর থানায় ১১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১২ জুন ৭ জনকে আসামি করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সজীব খান। বিচারিক প্রক্রিয়ায় মামলার বাদী, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকসহ ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি এবং আসামি পক্ষে ছিলেন এডভোকেট আলমগীর কিবরিয়া কামরুল।
এনএস/
আরও পড়ুন