ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

চোরের ১০ দিন গৃহস্থের একদিন

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:০৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০

মাঝে মধ্যে দিনের বেলায় কাজ করেন রাজমিস্ত্রী হিসেবে, রাতে নাইট গার্ডের ডিউটি করেন মাছের ঘেরে। যৎসামান্য আয়ে সংসার চালানো হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য। কোনও রকম একটি কুড়ে ঘরে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে দিনাতিপাত করতেন আসলাম হোসেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেখানে গড়ে ওঠে পাকা দালান বাড়ি, পাশে একটি গরুর খামারও!

গ্রামবাসীর চোখ পড়ে পরিবর্তিত এই পরিবারটির উপর। দারিদ্র আসলাম হোসেন হঠাৎ করে আলাদীনের চেরাগ হাতে পেলো কি না- তা নিয়েই ভাবতে থাকে গ্রামের কয়েকজন সচেতন মানুষ।

এরই মধ্যে গত ২১ ডিসেম্বর যশোরে বিজিবি‘র হাতে ২০টি (২ কেজি ৩৩৪ গ্রাম) স্বর্ণের বারসহ আসলামের পুত্র ইমাদুল আটক হওয়ার পর গ্রামবাসী জানতে পারে- পাকা বাড়ি ও গরুর খামারের রহস্য। 

জানা যায়, বেনাপোল স্থলবন্দর থানার কাগজপুকুর গ্রামের আসলাম হোসেন ও পুত্র ইমাদুল নিজ নিজ কাজের ফাঁকে স্বর্ণ চোরাচালানী গডফাদারদের স্বর্ণের বার বহন করে সীমান্তে নিয়ে যেতো। অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় জড়িয়ে পড়ে পরিবারটি। 

আটক যুবক ইমাদুল বিজিবি‘র কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, তাতেও উঠে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ পাচারের কথা। ইমাদুল এর আগে তিন দফা সোনা পাচার করেছে বলে স্বীকার করেন। তবে নিজেকে বহনকারী হিসেবে দাবি করেছে সে।

ওই গ্রামের আলী আজগর নামে এক ব্যক্তি বলেন- আসলাম ও তার পুত্র ইমাদুল হোসেন বেশ কিছুদিন যাবত অবৈধ কোনও পেশার সঙ্গে জড়িত হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছিলাম। হঠাৎ দেখছি তাদের কুড়ে ঘর থেকে পাকা বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে। পিতা পুত্রের এ কাজে সহযোগিতা করে তার মা ফরিদা বেগম। 

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে- ইমাদুল যশোরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বর্ণ এনে পিতার কাছে দেয়। আর পিতা আসলাম মাছের ঘেরে চাকরির সুবাদে স্বর্ণ নিয়ে বাহাদুরপুর, শিকারপুর সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন হাত বদল করে ভারতে পাচার করে। 

গ্রামের লোকমুখে গুঞ্জন ওঠা- চোরের ১০ দিন, গৃহস্থের এক দিন। ঠিক সেই কাজটিই যেন হয়েছে এই পরিবারটির ক্ষেত্রে। আসলাম হোসেন যে বাড়ি নির্মাণ করছেন সেটা রাজমিস্ত্রী ও মাছের ঘেরের নাইট গার্ডের চাকরি করে করা সম্ভব নয়। স্বর্ণ পাচারের পাশাপাশি তারা ফেনসিডিল, ইয়াবারও ব্যবসা করে থাকেন বলে দাবি এলাকাবাসীর।

তবে ইমাদুল-এর মা ফরিদা বেগম বলেন- আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এ কাজ করব কেন? সে আগে বিএসআরএম-এ ফোরম্যান হিসাবে কাজ করত। কেন তাকে ফাঁসানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। 

অন্যদিকে, ছেলে আটক হওয়ার পর থেকে তার পিতা আসলাম হোসেন গা ঢাকা দেওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

যশোরের ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সেলিম রেজা জানান- ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সোনা চোরাচালানীদের একটি চক্র রাজধানী ঢাকা থেকে সোনার বার নিয়ে যশোরে আসে। ওই চক্রের বেনাপোল এলাকার সদস্য ইমাদুল যশোরে এসে তাদের কাছ থেকে সোনার ২০টি বার বুঝে নেয়। যশোর শহরের একটি ঘরে বসে সোনার বার হাতবদল করা হয়। ইমাদুল বিশেষ কায়দায় দুটি পায়ের উরুর সাথে বেঁধে রাখে সোনার বার। এরপর সে রুট পরিবর্তন করে পৌর পাকের সামনে হয়ে যাওয়ার সময় বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়। পরে তার শরীরে তল্লাশি চালিয়ে সোনার ২০টি বার উদ্ধার করা হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ কোটি ৬৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। 

তিনি আরও জানান- প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমাদুল এর আগে তিন দফা সোনা পাচার করার কথা স্বীকার করেছে। তবে নিজেকে বহনকারী হিসেবে দাবি তার।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি