জীবন যুদ্ধে পরাজিত ঠাকুরগাঁওয়ের দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা
প্রকাশিত : ১৭:৫৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০
মুক্তিযুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পাননি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের দেবীগঞ্জ বাজারের মৃত তুফান বর্মণের ছেলে লক্ষীন্দর বর্মণ।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম তালিকাভূক্ত না হওয়ায় জীবনের শেষ বয়সে এসে অযতœ-অবহেলায়, অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটছে লক্ষ্মীন্দরের। কাধে-কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সহযোদ্ধারাও তার এই দুর্দশায় হতাশা ও অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধের ৭নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কাজী নূরুজ্জামানের নির্দেশে দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধ করেন তিনি তার সহযোদ্ধা ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কালিচরন দাস (লাল বার্তা নং-০৩১০০১০২৭), মো: আমিনুর ইসলাম ( লাল বার্তা নং ০৩১০০১০২০২), আশারু সরকার (লাল বার্তা নং-০৩১০০০১১১) ও চৈতন্য বর্মণ (লাল বার্তা নং ০৩১০১০২৪)।
তাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিলেও দুঃখজনকভাবে আজও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে লক্ষ্মীন্দরের নাম তালিকায় উঠেনি। জীবনের শেষ বয়সে এসে তিনি ভিক্ষা করে ৩ সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন লক্ষ্মীন্দরের সহ-যোদ্ধারা। পাশাপাশি লক্ষ্মীন্দরের নাম গেজেটভুক্ত করার দাবি জানান তারা।
অন্যদিকে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নাম তালিকাভুক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। জীবনের শেষ মুহূর্তে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজের নামটুকু মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় দেখে যেতে চেয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া পূর্ব কুচি- শহর এলাকার মৃত ধন মোহাম্মদের ছেলে মৃত আজিজুল হক। কিন্তু তিনি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে দফতরে দফতরে ঘুড়ে ও পরীক্ষা দিয়েও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নামটুকু যোগ করতে পারেননি। অবশেষে অসুস্থ হয়ে ২ বছর আগে মারা যান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ৬নং সেক্টর উইং কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশারের নির্দেশে দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধ করেন তিনি। তার সহযোদ্ধা ছিলেন পজির উদ্দীন( মুক্তি বার্তা নং- ০৩১০০১০১৩৯) মো: ইব্রাহীম (মুক্তি বার্তা নং- ০৩১০০১০১৬৮) আব্দুল কাদের (মুক্তি বার্তা নং- ০৩১০০১০৮৬)।
ভারতের থুকরা বাড়িতে যুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পর্যন্ত সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বি ত হয়ে আসছেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।
আজিজুল হকের সহযোদ্ধারা জানান, তাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করতে এবং অসহায় পরিবারের দায়িত্ব নিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানান তার সহযোদ্ধারা।
আজিজুল হকের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো। মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তিনি অনেকের কাছে ঘুড়েছেন। অনেকবার ইউএনও স্যারের কাছে পরিক্ষাও দিয়েছেন। তিনি দুই বছর আগে অসুস্থ্য হয়ে মারা যান। আমি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে গৌরবের সঙ্গে বাঁচতে চাই।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান বলেন, মৃত আজিজুল হক একজন প্রকৃত মুক্তীযোদ্ধা ছিলেন। আমিসহ আরো কয়েকজন আজিজুল ভাইয়ের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছরেও তার নামটি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় কষ্ট লাগছে।
মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মো: মান্নান বলেন, আমার কাছে কেউ কোন আবেদন করেনি। যেহেতু সহযোদ্ধারা বলছেন তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সে হিসাবে যাচাই-বাছাই করে লক্ষীন্দর ও আজিজুল হকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এমপি মহোদয় বলেছেন, ট্রেনিং এর কাগজপত্র দেখাতে না পারলে কাউকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করা যাবে না।
আরকে//
আরও পড়ুন