প্রতিবন্ধী মুক্তিযোদ্ধাকে বরাদ্দ পাইয়ে দিতে অর্থ আত্মসাথের অভিযোগ
প্রকাশিত : ১৯:৩৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০
নওগাঁর মান্দায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা প্রতিবন্ধী কালীপদ সরকারকে সরকারি বসতবাড়ি ‘বীর নিবাস’ বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়ার নামে লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তারই সহযোদ্ধা আফছার আলী মন্ডলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় টাকা ফেরত চেয়ে আদালতে মামলা করেও পুলিশের অনীহা আর অবহেলার কারনে এখনো প্রতিকার পাননি তিনি। এদিকে ব্যাংক থেকে ঋণ করে ওই টাকা দেওয়ার কারনে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তিনি এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার বিকেলে মান্দা প্রেস ক্লাবে এসে তিনি এই অভিযোগ করেন।
জানা গেছে মান্দা উপজেলার মৈনম ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের মৃত গুমানী সরকারের ছেলে কালীপদ সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। এসময় তিনি পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। এই অবস্থায় তাঁর শ্রবনশক্তি লোপ পায়। সেই থেকে গ্রামের কুড়ে ঘরে বসবাস করে কোনভাবে জীবন চালিয়ে আসছিলেন। ২০১৯ সালে সরকার ঘোষনা করেন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ”বীর নিবাস” নামে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। ওই সালের ৬ অক্টোবর মান্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আফছার আলী মন্ডল কালীপদ সরকারকে ৬ মাসের মধ্যে বীর নিবাস পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁর নিকট থেকে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সেই টাকা আবার কালীপদ মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় স্থানীয় সোনালী ব্যাংক থেকে মাসিক কিস্তিতে ঋণ উত্তোলন করেন।
অভিযোগ রয়েছে সেই সময় ব্যাংক থেকে ঋন মুঞ্জুর করে দেওয়ার নামে আফছার আলী তাঁর নিকট থেকে আরো ৫ হাজার টাকা গ্রহন করেন। এদিকে গত এক বছরেও কালীপদ সরকারের নামে বীর নিবাস এর বরাদ্দ করে দিতে না পারলে টাকা ফেরতে দাবি করেন কালীপদ। এরপর থেকে আফছার আলী কালীপদকে ঘুরাতে থাকে এবং তাঁকে নানাভাবে হয়রানী করতে থাকে। এক পর্যায় কালীপদ সরকার চলতি সালের ২৬ নভেম্বর টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে আফছার আলীকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটির এজাহার প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তা রেকর্ডভূক্ত করার জন্য মান্দা থানাকে নির্দেশ দেন আদালত। এদিকে গত ২ ডিসেম্বর মামলাটির এজাহার থানায় পৌছলেও রহস্যজনক কারনে ১৩ ডিসেম্বর মামলাটি রেকর্ড ভুক্ত করে মান্দা থানা। মামলা নং ২০, ১৩ ডিসেম্বর,২০২০।
মুক্তিযোদ্ধা কালীপদ সরকার বলেন আমি সরল বিশ্বাসে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ১ লাখ টাকা প্রদান করি আফসার আলী মন্ডলকে। কথা ছিল ৬ মাসের মধ্যে আমাকে বীর নিবাস বাড়ি করে দেওয়া হবে। কিন্ত গত ১ বছরেও আফছার আলী আমার নামে বীরনিবাস করে দিতে পারেনি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টো আমাকে নানা ভাবে হয়রানী করা হয়।
এই অবস্থায় আদালতে মামলা করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। তিনি অভিযোগ করে বলেন গত ২ ডিসেম্বর আদালত থেকে পাঠানো মামলার এজাহারটি থানায় পেলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কোন উদ্যোগ নেইনি। এমনকি আফছার আলী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও থানা পুলিশ তাকে কিছু বলছে না। এতে করে একদিকে আমি ন্যায় বিচার নিয়ে যেমন শংকিত,তেমনি প্রতিমাসে ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আবার প্রভাবশালী আফসার আলীর সাঙ্গপাঙ্গদের হুমকি-ধামকিতে পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।
তবে বাড়ি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মান্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফছার আলী মন্ডল। তিনি বলেন, যে সময়ের কথা উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয়েছে সেসময় আমি কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলাম না। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের বসতবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘর পাবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা। আমি ওই কমিটির কেউ না। একটি মহল ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এব্যাপারে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর রহমান আদালতের নির্দেশনায় গত ১৩ ডিসেম্বর মামলাটি রেকর্ডভূক্ত করে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তদন্ত সম্পন্ন হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আরকে//
আরও পড়ুন