শীতার্তদের পাশে শিক্ষিকার ‘মানবতার দেওয়াল’
প্রকাশিত : ১৫:১৫, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় স্বার্থপর মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূরত্ব। মানবিক সংকটের এই কালেও কেউ কেউ মানবতার ছাতা ধরেন অসহায় মানুষদের মাথার ওপর। এমনই একজন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমনা আক্তার শিমু। কেবল মানবিক দায়িত্ব বোধ থেকেই তৈরী করেছেন মানবতার দেওয়াল।
শুধু তাই নয়, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সেবাধর্মী মনোভাব তৈরি করে হারিয়ে যাওয়া নৈতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছেন প্রাণপন। বিপর্যস্ত এই সময়ে আশার আলোর মতও গড়ে তুলেছেন "আলোকবর্তিকা" নামে শিক্ষামূলক সংগঠন।
শিশু-কিশোরদের চোখে স্বপ্ন বুনে দিতে, মানবিক গুণাবলী হৃদয়ে রোপন করতেই তিনি গড়ে তুলেছেন সংগঠনটি। আর এই সংগঠনের ব্যানারেই তিনি সৃষ্টি করেছেন "মানবতার দেওয়াল"। এই শীতে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যেন এখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় নিয়ে পরতে পারে এবং সমাজের বিত্তবানেরা যেন তাদের অপ্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় রেখে যায় এখানে- সেই উদ্দেশ্যেই নির্মাণ করা হয়েছে মানবতার দেওয়াল। এই প্রচেষ্টা তিনি গত এক বছর ধরেই চলিয়ে আসছেন বলে জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত বছরের মতও করে আরও নতুন উদ্যোমে শাহজাদপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে দেয়ালের সাথে হ্যাঙ্গারে বিভিন্ন ধরনের পোশাক ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়ের কিছু অভিভাবক ও শিক্ষার্থী ওই দেয়ালে পোশাক রেখে যাচ্ছেন এবং সেখান থেকে বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী তাদের প্রয়োজনীয় পোশাক নিয়ে ব্যবহার করছে। সুবিধাবঞ্চিত ও অভাবগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস ও পরিধেয় কাপড় সরবরাহের জন্য এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুমনা আক্তার শিমু এমন উদ্যোগ নিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মানবতার দেওয়ালের উদ্যোক্তা সুমনা আক্তার শিমু বলেন- বিদ্যালয়ের ধনী পরিবারের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা নতুন ও তাদের অব্যবহৃত পুরাতন স্কুল ড্রেস ও পরিধেয় কাপড় এই দেয়ালে টাঙিয়ে রাখবে। বিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থীদের কাপড় প্রয়োজন ওই দেওয়াল থেকে তারা নিয়ে ব্যবহার করবে। সুবিধা বঞ্চিত ও অভাবগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস ও পরিধেয় কাপড় যোগান দিতেই এটি চালু করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক গুণাবলী বিকশিত হবে। মানবতার এই দেওয়ালটি সব সময়ই চালু থাকবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, বর্তমান সময়ে মানুষের সবচেয়ে বড় সংকট মানবিক বিপর্যয়। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করাই "আলোকবর্তিকা"র প্রধান উদ্দেশ্য।
এই সংগঠন-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেকে একজন নির্ভিক, ন্যায়নিষ্ঠ, পরপোকারী, উদ্যমী সচেতন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে অনুপ্রেরণা পাবে বলে জানান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক আজাদ রহমান।
তিনি জানান- বাধ্যবাধকতা নয়, উৎসাহ আর অনুপ্রেরণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক গুণাবলীর বিকাশ এবং শিক্ষাগ্রহণের প্রতি মনোযোগী করে গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা প্রদান করছে। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভাগুলো যেন প্রস্ফুটিত হতে পারে সেই সুযোগ করে দিয়ে পরিশুদ্ধ মানুষ গঠনের লক্ষ্যেই সংগঠনটি ভূমিকা রাখছে। এজন্য শিক্ষিকা সুমনা আক্তার শিমুসহ সবার সফলতা কামনা করছি।
এনএস/
আরও পড়ুন