সিরাজগঞ্জে ওয়ার্ড আ.লীগের প্রার্থীদের কাছে অর্থ আদায়ের অভিযোগ
প্রকাশিত : ১৫:৫০, ৬ জানুয়ারি ২০২১
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ৪০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের কাছে ফরম বিক্রির নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। দলীয় গঠনতন্ত্র না মেনে অবৈধভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতি প্রার্থীর কাছ থেকে ১১শ/১২শ’ করে টাকা হাতিয়ে নেয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
এছাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে মূল দায়িত্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের থাকলেও তাদেরকে ছাড়াই থানা আওয়ামী লীগ কমিটি পকেটস্থ করতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকরা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ করেছেন। গঠনতন্ত্র বিরোধী অবস্থান নিয়ে থানা আওয়ামী লীগের এমন কাজ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশ অনুযায়ী দলের নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীদের নিয়ে তৃনমুলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী এনায়েতপুর থানার ৫টি ইউনিয়নের ৪০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি করার লক্ষে ইউনিয়ন পর্যায়ে বর্ধিত সভা করা হয়।
এরপর গত ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য কাউন্সিলর সংগ্রহ করে। এরপর যারা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তাদেরকে থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হতে মনোনয়ন ফরম নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। সে অনুযায়ী এই দুই পদের প্রার্থীরা ফরম উত্তোলন করতে গেলে প্রতি জনের কাছ থেকে ১১শ/১২শ করে হাতিয়ে নেয়।
এ ব্যাপারে থানার সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের বেতিল ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী আনোয়ার হোসেন শেখ, খুকনী ইউপির গোপিনাথপুর ৮নং ওয়ার্ডের সভাপতি পদের তায়জুল ইসলাম, স্থল ইউপির গোয়ালবাড়ি ৩নং ওয়ার্ডের সেক্রেটারি পদের খোরশেদ আলম, দৌলতপুর আঞ্চলিক ইউনিয়নের আজগড়া ৬নং ওয়ার্ডের সভাপতি প্রার্থী শাহজাহান আলী মন্ডল জানান, অতীতেও আমরা আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি হতে দেখেছি। আমরাও ছিলাম। তবে কখনো টাকা নিয়ে ফরম বিক্রি করতে দেখিনি। আর কমিটি করে দিয়েছে ইউনিয়নের নেতারা। এখন দেখছি পুরো উল্টো। পুরো নিয়ন্ত্রণ করছে থানা আওয়ামী লীগ। মূলত কমিটি তাদের পক্ষে নিতেই বিএনপি নেতাদেরও নেতা বানানোর চেষ্টা চলছে। আমরা এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নিয়ম বহির্ভূতভাবে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে পুরো থানাজুড়ে আওয়ামী লীগের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে খুকনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ মিয়া, জালালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, ইউপি চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ, সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, স্থল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রফিক অভিযোগ করে জানান, আমরা জানি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ হবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অধীনে। সমস্যা হলে থানা আওয়ামী লীগ তা নিরসন করবে। তবে আমাদের পুরোপুরি বাদ রেখে থানা আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের পকেট কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে। এমন নিয়ম আমাদের আওয়ামী লীগে নেই। তারা নিজেরাই আলাদা গঠনতন্ত্র বানিয়েছে। এছাড়া ফরম বিক্রি করে লাখ-লাখ টাকা নিচ্ছে তারও দলীয় গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। এজন্য ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে পুরোপুরি অসন্তোষ বিরাজ করছে। আমরা চাই জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ দ্রুত এ বিষয়ে যেন ব্যবস্থা নেয়।
এ ব্যাপারে থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজগার আলী বিএসসি জানান, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, এমপি পদে দল থেকে মনোনয়ন সংগ্রহের সময় টাকা নেয়া হয়। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে কেন হবে না। এছাড়া নানাবিধি খরচা হওয়ায় টাকাটা আমরা নিচ্ছি প্রার্থীদের কাছ থেকে।
তবে টাকা নেয়ার নিয়ম আছে কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে থানা আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের ৫১-তে কমিশন করে থানা আওয়ামী লীগকে তদারকি করার বিধান রয়েছে। তবে তাও নেই বললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে এখন থানাজুড়ে তোলপাড় চলছে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ চেয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) রাতে জেলা আওয়া মীলীগ কার্যালয়ে গিয়ে নেতাদের কাছে অভিযোগ তোলেন থানা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার জানান, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা আসলেই গঠনতন্ত্র বিরোধী। তাই নিয়মানুযায়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে দিয়েই যাতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দক্ষ কমিটি হয় সে লক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
এআই/এসএ/
আরও পড়ুন