রাস্তার পাশে পড়ে থাকা বৃদ্ধের পাশে উদ্ভাবক মিজানুর
প্রকাশিত : ২৩:২৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২১
দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার ধারে একাকী পড়ে আছেন এক বৃদ্ধা। জরাজীর্ণ শরীরে নেই কোনও বলশক্তি। শীতার্ত আবহাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে জবুথবু হয়ে শুয়ে থাকা বৃদ্ধার গায়ে নেই কোনও গরম কাপড়। খাবারের নির্দিষ্ট কোনও ব্যবস্থা না থাকায় অনাহারে থাকেন অধিকাংশ সময়। কেউ কোনও খাবার দিলে তা খেয়ে একটু বাঁচিয়ে রাখেন পরের বেলার জন্য। খাবার না থাকলে কখনও না খেয়ে কখনও খালে বিলে কিংবা ডোবা জলাশয় থেকে ছোট ছোট কাঁকড়াও খেতে দেখা যায় তাকে।
বলছিলাম মনিকা নামে যশোরের শার্শা উপজেলার এক বৃদ্ধ মায়ের কথা। বেনাপোল বাইপাস সড়ক বেয়ে কিছুদূর এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে এই বৃদ্ধাকে। এলাকাটি ভবারবেড়ের শেষাংশে পড়েছে। সড়কের দুই ধারের আবাদি জমির বুক চিরে বয়ে যাওয়া সড়কটির খুব কাছেই মনিকা নামের এই মায়ের চাহনি ঠিকঠাক দেখেনি কেউ। সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ। দিগন্তজোড়া মাঠ প্রান্তে অপলোক চেয়ে থাকা মায়ের নির্বাক চাহনি কারো মন না কাড়লেও থমকে গেছে ১৪ বছরের মাহামুদুল্লাহ নামে এক যুবক। সহায় সম্বলহারা গৃহহীন এই মমতাময়ী মায়ের অসহায়ত্বের একটি ছবি শেয়ার করে শার্শার কৃতি সন্তান দেশ সেরা উদ্ভাবক মিজানুর রহমানের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে।
যেখানে দেখতে পাওয়া যায় মনিকা রানী কাঁকড়া ধরে একটি পাত্রে সেগুলি আগুনে পুড়িয়ে খাচ্ছে। উদ্ভাবক মিজানের সাথে মাহামুদুল্লার ফেসবুকে যুক্ত থাকলেও চেনাজানা নেই একে অপরের সাথে।
একটি পোষ্টে পরিচয়, তারপর মিজানকে নিয়ে গেলো সেই বৃদ্ধ মায়ের কাছে। উদ্ভাবক মিজান বৃদ্ধ মাকে দেখতে সাথে নিয়ে গেলেন রান্না করা খাবার, কিছু শুকনা খাবার এবং শীত নিবারনের জন্য কম্বল। শুধু তাই নয়, নিজ হাতে মনিকা রানীকে খাবার খাইয়ে দিলেন তিনি। বৃদ্ধ অসহায় এই মাকে একটু ভালভাবে রাখা এবং আজীবন খাবার খাওয়ানোর জন্য আশ্বস্ত করেন মিজান। এসময় মিজান ওই মাকে খাওয়ানোর সময় তার অসহায়ত্বের কথা ভেবে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
উদ্ভাবক মিজান এ সময় বলেন, মনিকা রানী নামের এই বৃদ্ধ মা দীর্ঘ তিন থেকে চার মাস যাবত এভাবে রাস্তার ধারে খোলা আঁকাশের নিচে একাকি রাত যাপন করে আসছেন। এতোদিনে আমার নজরে আসেনি। আজ যখন নিজের চোখে এসে তাকে দেখলাম, চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।
আজ থেকে তার সমস্ত দেখভাল আমার। আমি ধন্য তার মুখে খাবার তুলে দিতে পেরেছি। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, সকলে যেন এমন মানুষদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তার জন্য মানবিক আবেদন করছি।
এসময় উদ্ভাবক মিজানের সাথে ছিলেন নাভারণ ফ্রি খাবার বাড়ির পরিচালক বাদল হোসেন, তরুণ সমাজ সেবক কিশোর মাহামুদুল্লাহ এবং সাংবাদিক জসিম উদ্দিন সহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
এনএস/
আরও পড়ুন